রাজধানীর বাড্ডায় বাংলা এডিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মৃদুল ইসলাম এবং ক্যামেরাপার্সন দেলোয়ারের ওপর এভাবেই ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। শনিবার সাতারকুলের মগরাদিয়া মাকান হাউজিংয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দখলবাজি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন তারা।
ওই এলাকার ভিডিও ফুটেজ এবং তথ্য সংগ্রহের সময় প্রথমে চিত্রসাংবাদিক দেলোয়ার হোসেনকে বেধড়ক মারধর, বুকে লাথি ও কিল-ঘুষি দেয় সংঘবদ্ধ চক্র। এতে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। দেলোয়ার হৃদরোগজনিত জটিলতায় ভুগছেন, তাই উপর্যুপরি আঘাতে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার সময় বাংলা এডিশনের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে সন্ত্রাসীরা।
এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় বাংলা এডিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মৃদুল ইসলামের ওপরও চড়াও হয় সন্ত্রাসীরা। তাঁকে চরমভাবে হেনস্তা করা হয় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। এক পর্যায়ে মৃদুলকেও মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখে তারা।
এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বাংলা এডিশনের আরও দুটি টিম। এসময় সন্ত্রাসীদের সারি সারি গাড়িবহর এলাকা ত্যাগ করতে দেখা যায়। এডিশন টিমকে দেখে আবারও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তারা। পরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাংলা এডিশন টিম তাদের গাড়ির সামনে দাঁড়ায়। তখন অভিযুক্তদের বহনকারী গাড়িটি সাংবাদিকদের ওপর উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বাড্ডা থানার একটি চৌকস টিম। পুলিশের সামনেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে স্থানীয় জনতার তোপের মুখে অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেনসহ হামলাকারীদের আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন হামলাকারী পালিয়ে যায়।
এরই মধ্যে এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বাংলা এডিশন কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন, স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় ৫০ জন।
অভিযোগ আছে, মাকান হাউজিং এলাকায় ‘রিয়াজুল জান্নাহ ইসলামিয়া মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আড়ালে অন্তত ৪০টি প্লট দখল করে রেখেছেন তিনি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে, প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে এবং পালিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন মোশাররফ।
তাই বিস্তারিত অনুসন্ধানে নামে বাংলা এডিশন টিম। সেদিন অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বিশেষ প্রতিনিধি মৃদুলের সামনে ভুক্তভোগীরা মোশাররফের দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় মাদ্রাসার আড়ালে ছাত্র পরিচয়ে থাকা তার পালিত সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় টিমের ওপর।
কীভাবে হামলার শিকার হয়েছেন, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন চিত্রসাংবাদিক দেলোয়ার।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাংলা এডিশনের গাড়িচালক হাসেমও দিয়েছেন ঘটনার রোমহর্ষক বিবরণ।
জানা গেছে, মোশাররফের দুই ছোট ভাইয়ের ইন্ধনে এই হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে একজন ওই প্রকল্পের মধ্যেই আস্তানা গেড়ে রেখেছেন এবং সেখানকার সন্ত্রাসীদের লালনপালন করেন বলে অভিযোগ আছে। হামলার সময় মোশাররফের গাড়িচালকও উপস্থিত ছিলেন। তিনিই সরাসরি আঘাত করেন বাংলা এডিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মৃদুল ও চিত্রসাংবাদিক দেলোয়ারের ওপর।
এর আগে হাসিনার আমলে আইডিআরএ’র পদে থেকে মাত্র ছয় মাসে শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে মোশাররফের বিরুদ্ধে। রাজধানীর কাফরুল, শেওড়াপাড়া ও ধানমন্ডি এলাকায় বিলাসবহুল তিনটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে। রাজধানীর সাতারকুলে ‘মাকাম হাউজিং’ নামে বিশাল প্রকল্পও রয়েছে তার। এ প্রকল্পে ‘কোয়ান্টাম প্লাস ফাউন্ডেশন’-এর নামে ৮৬টি প্লটের মালিক মোশাররফ। ফাউন্ডেশনের আওতায় কোয়ান্টাম প্লাস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কোয়ান্টাম দুগ্ধ খামার, কোয়ান্টাম বৃত্তি প্রকল্প ও ‘ফ্যামিলি বাজার’ নামে একটি বড় মার্কেট রয়েছে, যা সচিব পরিচয়ধারী মোশাররফের নিয়ন্ত্রণাধীন।
এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট স্টক থেকে লাইসেন্স নেওয়া হলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন মোশাররফ নিজে। মাকাম হাউজিংয়ের ভিতরে ‘কোয়ান্টাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ৫০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অনলাইনে কেবল নামের ছাড়পত্র নিয়েই চালানো হচ্ছে ফাউন্ডেশনটি, যা নিবন্ধনের বৈধ প্রমাণ নয়। তার প্রতিষ্ঠিত এসব প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন এলাকার কিছু লোকজন ও তার পালিত সন্ত্রাসীরা।
এছাড়া মোশাররফের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। একই সঙ্গে নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ অর্জনের উৎস অনুসন্ধানও চলছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে মোশাররফ হোসেনের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
আরও পড়ুন:








