বৃহস্পতিবার

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩ পৌষ, ১৪৩২

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর, ২০২৫ ২১:০৫

শেয়ার

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ
ছবি: বাংলা এডিশন

গাজীপুরের শ্রীপুরে এক মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এএ ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা। মধ্যাহ্ন (লাঞ্চ) বিরতির পর শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশ না করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এতে সড়কের উভয় পাশে যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকায় কারখানার সামনে সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করে।

বিক্ষোভকারী শ্রমিকেরা জানায়, প্রতি মাসের সপ্তম কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বেতন দিচ্ছে না। বারবার তারিখ দিয়েও মালিক কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করছে না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বকেয়া বেতন পরিশোধের তারিখ দিয়েছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। আমরা কাজে এসে জানতে পারি, আজকের তারিখেও বেতন দিতে পারবে না। পরে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কারখানা অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ এবং থানা পুলিশ কারখানার বাইরে অবস্থান নেয়। দুপুরের পর শ্রমিকেরা মধ্যাহ্ন (লাঞ্চ) বিরতিতে কারখানার বাইরে গেলে তারা সড়ক অবরোধ করে।

শ্রমিকেরা আরও জানায়, আমাদের সকল সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে মালিক পক্ষ। আগে শ্রমিকদের কারখানায় যাতায়াতের জন্য যানবাহন ছিল। এখন আমাদের নিজের টাকা দিয়ে কারখানায় আসতে হয়। মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতন দেয়। প্রতি মাসে কারখানায় আসা-যাওয়ায় দুই হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। ১২ হাজার টাকা বেতনের মধ্যে দুই হাজার টাকা চলে গেলে ১০ হাজার টাকা দিয়ে কি সংসার চলে? কোনো রকমে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারি। আমাদের বেতন না দিলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। স্বামী-স্ত্রী দুই জনে মিলে চাকরি করে অল্প বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সামনে বাচ্চাদের বার্ষিক পরীক্ষার ফি দিতে হবে, স্কুলের বেতন দিতে হবে, সারা মাস দোকান থেকে বাকি নিয়ে খেতে হয়, দোকানের বাকি টাকা না দেওয়ায় খাওয়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে দোকানিরা। বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য মালিকেরা প্রতিদিন চাপ দিচ্ছে। আমাদের কষ্টের কথা কেউ চিন্তা করে নাকারখানা কর্তৃপক্ষ, দোকান মালিক, বাড়ির মালিক এমনকি বাচ্চাদের স্কুলের শিক্ষক ও মালিকেরাতারা সবাই নিজের চিন্তা করে। তাহলে আমরা কাজ করে সময় মতো বেতন না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বেতনের জন্য রাস্তায় নামতে হয়েছে। রাস্তায় নামার পর পুলিশ দিয়ে আমাদের ধাওয়া দেয়, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে, লাঠিপেটা করে। এমনিতেই বেতন না পাওয়ায় খাওয়ার টাকা নেই, তার ওপর পুলিশের বাড়ি খেয়ে অনেকে আহত হয়েছে। এখন তারা চিকিৎসার টাকা পাবে কোথা থেকে? আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক, ফার্মেসি এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল লতিফ জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ সেপ্টেম্বর মাসের বেতন পরিশোধের জন্য একাধিকবার তারিখ দেয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বেতন পরিশোধের কথা ছিল। শ্রমিকেরা কারখানায় এসে যখন জানতে পারে আজকেও তাদের বেতন দেবে না, তখন তারা কাজ বন্ধ করে কারখানা অভ্যন্তরে অবস্থান নেয় এবং আন্দোলন শুরু করে। তারা বেতন না দেওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ দেবে না বলে কর্তৃপক্ষকে জানায়। পরে মধ্যাহ্ন (লাঞ্চ) বিরতির পর শ্রমিকেরা কারখানার বাইরে গেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে সড়কের উভয় পাশে যানজট সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ এবং থানা পুলিশ শ্রমিকদেরকে সড়ক থেকে সরে যেতে বললেও তারা সড়ক ছাড়েনি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করলে বিকেল ৩টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী রবিবার (২৬ অক্টোবর) বকেয়া বেতন পরিশোধের ঘোষণা দিলে তারা সন্ধ্যা ৬টার দিকে চলে যায়। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এখনো কারখানার সামনে শিল্প ও থানা পুলিশ অবস্থান করছে।

এএ ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বকেয়া বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে রবিবার (২৬ অক্টোবর) বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে বলে শ্রমিকদের জানিয়ে দিলে তারা বাড়িতে চলে যায়। শুক্রবার ও শনিবার কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।



banner close
banner close