মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

যেভাবে অভিনেত্রীদের কু প্রস্তাব দিতেন সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১১:৫৯

আপডেট: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১১:৫৯

শেয়ার

যেভাবে অভিনেত্রীদের কু প্রস্তাব দিতেন সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক
ছবি: সংগৃহীত

আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অস্ত্র জমা দিয়েছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেইনি, চেতনা জমা দেইনি। গত বছরের ১৮ জুলাই এক সমাবেশে এমন কথা বলেন সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তার সেই বক্তব্যের প্রসঙ্গ এবার উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

সোমবার জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-এক এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

এ ছাড়া জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোজাম্মেলের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। ঘটনাপ্রবাহ-৪ এ ২০২৪ সালের ১৮ জুলাইয়ের বিবরণ দেন তিনি। ওই দিন ঢাকাসহ দেশের ৪৮টি জেলায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হাসিনার নির্দেশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে ড্রোনে চিহ্নিত করে প্রাণঘাতি অস্ত্রে শতাধিক ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে।

ওই দিনই মোজাম্মেল বলেন, তারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অস্ত্র জমা দিয়েছেন, ট্রেনিং জমা দেননি। এই মোজাম্মেলই, ১৯৭২ সালে নববধূকে ধর্ষণের পর হত্যা করে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। এ সময় হুমায়ুন আহমেদের ‘দেয়াল’ উপন্যাসের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন তাজুল ইসলাম।

বর্নিত তথ্যানুযায়ী এক নবদম্পতি গাড়িতে করে যাচ্ছিল। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মোজাম্মেল দলবলসহ গাড়ি আটক করে। এরপর গাড়ির ড্রাইভার ও নববিবাহিত তরুণীর স্বামীকে হত্যা করে তারা। আর মেয়েটিকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে। এরপর ভুক্তভোগী নববধূর রক্তাক্ত মরদেহ তিনদিন পর পাওয়া যায় টঙ্গী ব্রিজের নিচে।

এই ঘটনায় মেজর নাসিরের হাতে ধরা পড়েন মোজাম্মেল। পরে ওই মেজরকে তিন লাখ টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেন তিনি। প্রস্তাবে রাজি না হয়ায় মেজরকে মুজিবের কথা বলে ভয় দেখান মোজাম্মেল। সেই সাথে এও বলেন, এমন তুচ্ছ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাননি তিনি। ধারণা করা হয়, মুজিবের কড়া নির্দেশেই ধর্ষক মোজাম্মেলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন ওই মেজর। ছাড়া পেয়ে মেজর নাসিরকে উপহাস করতে ছাড়েননি তিনি।

শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন তিনি। এছাড়া তিনি নিজেও একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। একইসাথে এই মোজাম্মেল প্রায় ২৫ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন-এমন অভিযোগ ৭১-এর সম্মুখসারির একাধিক যোদ্ধার। তাদের মতে, শুধু ভুয়া সনদ বিক্রি করেই ক্ষান্ত হননি, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ‘টেম্পারিং’ করে সনদ নিয়েছেন নিজেও।

এ ছাড়া নানা সময়ে বিভিন্ন অভিনয় শিল্পীদের উত্যক্ত ও কু প্রস্তাব দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে। আওয়ামী শাসনামলে অভিনেত্রী ইলোরা গহরকে ভিডিও কল দিয়ে একাধিকবার উত্যক্ত করেছে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

মোজাম্মেলের এসব কর্মকাণ্ডে বেশ ক্ষুব্ধ হতেন বলে জানান এই অভিনেত্রী।

পরবর্তিতে ইলোরা গহরকে কু প্রস্তাব দেন মোজাম্মেল। ফোন কলেও যৌন চাহিদা চিরতার্থ করার পৈশাচিক চেষ্টাও করেন। না পেরে শেষেমেস আমন্ত্রন জানান তার অফিসে। তবে, মোজাম্মেল অবৈধ ডাকে সারা দেননি তিনি।

এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোজাম্মেল হকসহ জড়িতদের দ্রুত বিচার কাজ শেষ করার আহ্বানও জানিয়েছেন অভিনেত্রী ইলোরা গহর।

বিস্তারিত ভিডিও লিংকে: https://www.youtube.com/watch?v=gZ0rn6Kg8LA&t=15s



banner close
banner close