বিচারপতিদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি গাড়ি নেই। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের গাড়ি কেনার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ভাড়া গাড়িতে অফিসে যাওয়া আসা করেন হাইকোর্টের ১৫ বিচারপতি। ভাড়া বাবদ গাড়িপ্রতি মাসে গুনতে হচ্ছে প্রায় লাখ টাকা। এর পাশাপাশি গাড়িপ্রতি মাসে ২২৫ লিটার জ্বালানি সরবরাহ করা হয়, যা ব্যয়বহুল।
আইনজীবীরা বলছেন, এতে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা বাড়ানোসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রয়েছেন সাত ও হাইকোর্ট বিভাগে ১১৩ বিচারপতি। গত বছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ৯ অক্টোবর প্রথম দফায় ২৩ জন এবং দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্টে অতিরিক্ত ২৫ বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়।
সর্বশেষ হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ দেয়া অতিরিক্ত ২৫ বিচারকের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ১০ জনকে সরকারি গাড়ি দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৫ জনকে ভাড়া গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। এই প্রথম সুপ্রিম কোর্টে বিচারকদের ভাড়া গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর আগে মাজদার হোসেন মামলার রায়ে বিচারকদের গাড়ি ও আবাসস্থলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, 'নতুন বিচারকের জন্য পরিবহন পুল থেকে যানবাহন সরবরাহের জন্য সরকারের কাছে লিখিত অনুরোধ করা হয়েছে। জবাবে তারা জানিয়েছে, বিচারকদের জন্য উপযুক্ত গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না।' তিনি বলেন, 'নতুন বিচারকদের জন্য গাড়ি কেনার বিষয়ে তহবিলের ব্যবস্থা করতে সম্প্রতি অর্থ সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগির নতুন গাড়ি পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।'
রেন্ট-এ-কার সরবরাহকারী ঠিকাদার শামসুর রহমান বাবুল সমকালকে জানান, মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে তিনি ১৫টি প্রিমিও গাড়ি আগস্ট থেকে সরবরাহ করছেন। ২০১৮ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে গাড়িসহ বিভিন্ন মালপত্র সরবরাহ করেন বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি চালকরা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের চাহিদা এবং প্রটোকল বোঝেন। এ ব্যাপারে তারা প্রশিক্ষিত। ভাড়া গাড়ির চালকরা বিচারকদের জন্য দীর্ঘ সময় কাজ করতে অনীহা দেখান।
বিচার বিভাগ আলাদা করার মামলার বাদী অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মাসদার হোসেন বলেন, 'বিচার বিভাগ পৃথককরণ নিশ্চিত করতে ১৯৯৯ সালের আপিল বিভাগের নির্দেশনায় আর্থিক স্বাধীনতা ছিল মূলনীতিগুলোর একটি। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য ভাড়া গাড়িই প্রমাণ করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শুধু কাগজে কলমে।'
সুপ্রিম কোর্টে এখন ১৭৩টি সরকারি গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিকল। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সুপ্রিম কোর্ট কমপ্লেক্সে পড়ে আছে। আর্থিক সংকটের কারণে গাড়িগুলো মেরামত করা যায়নি।
আরও পড়ুন:








