ভারতকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশি ইলিশ তৃতীয় দেশে পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে গেছে। বেনাপোল ফিশ কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কর্মকর্তা আকসাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বৈধভাবে এক কেজি ইলিশও সীমান্ত পার হয়নি। স্থলবন্দরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, রপ্তানির জন্য দুটি ট্রাক এলে রহস্যজনকভাবে পরে তা ফেরত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ থেকে কেজিপ্রতি ১৯শ থেকে ২ হাজার টাকায় ইলিশ কিনে ভারতে পাঠাতে খরচ দাঁড়ায় ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা (২০-২১ ডলার)। অথচ রপ্তানি মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ১,৫২৫ টাকা বা সাড়ে ১২ ডলার। এতে খালি চোখে লোকসান দাঁড়ায় ৫০০-৬০০ টাকা।
কিন্তু কলকাতায় পৌঁছে সামান্য অংশ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হলেও বড় অংশ হিমায়িত করে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয় কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ ডলারে। ফলে প্রতি কেজিতে লাভ হয় প্রায় ২,৮০০ টাকা পর্যন্ত। এ কাজে সহযোগিতা করছে পশ্চিমবঙ্গের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
রপ্তানিকারকদের কলকাতায় আড়ত
কলকাতার বিভিন্ন বাজারে বাংলাদেশের অন্তত চারজন রপ্তানিকারকের আড়ত, ফ্ল্যাট ও ব্যবসায়িক স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে নীরব হোসেন টুটুলের নাম সবচেয়ে আলোচিত। তার শ্বশুরবাড়ি কলকাতার বশিরহাটে এবং তিনি চারটি লাইসেন্সে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছেন। সেভেন স্টার ফিশ প্রসেসিং করপোরেশন ও কেবিসিসহ আরও দুজন রপ্তানিকারকেরও হাওড়াসহ বিভিন্ন বাজারে আড়ত রয়েছে। স্থানীয় আত্মীয়স্বজনের নামে ভারতীয় রপ্তানি লাইসেন্স নিয়ে তারা পাচারকাজ চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকলেও প্রতিবছর দুর্গাপূজায় বিশেষ অনুমতিতে পাঠানো হয়। এবারও ১,২০০ টন রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু দেশের বাজারে দাম বেশি থাকায় ও রপ্তানি মূল্য কম নির্ধারণ করায় শুরু থেকেই প্রশ্ন ওঠে। লোকসানের হিসাব দেখিয়ে ভারত হয়ে তৃতীয় দেশে পাচারই ছিল আসল উদ্দেশ্য।
সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, সেখানে সহজেই পদ্মার ইলিশ পাওয়া যায়, যা ভারত হয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
গত শনিবার পাবনার সেভেন স্টার ফিশ প্রসেসিং করপোরেশনের দুই ট্রাক ভর্তি ইলিশ বেনাপোল পৌঁছালেও পরে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলে ফেরত আনা হয়। কোম্পানির প্রতিনিধি দাবি করেন, রপ্তানি মূল্য কম হওয়ায় বাজারেই বিক্রি করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন ওঠে—আগে থেকেই এ তথ্য জানা থাকলেও কেন ট্রাক পাঠানো হলো?
বাংলাদেশ ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিজামউদ্দিন বলেন, বিষয়টি সন্দেহজনক এবং সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দামের কারণে বাংলাদেশি ইলিশ আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রথম কয়েকদিনে সাত হাজার কেজি ইলিশ আমদানির পর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে তিনি কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
ভারত হয়ে বহু বছর ধরে চলা ইলিশ পাচারের চক্র এবার প্রকাশ্যে আসায় আপাতত বন্ধ হয়েছে রপ্তানি। তবে এই সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতেও জাতীয় মাছ ইলিশ পাচারের ঝুঁকি থেকেই যাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আরও পড়ুন:








