বুধবার

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২ পৌষ, ১৪৩২

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের শাহাদাতবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:৪৪

আপডেট: ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:৪৪

শেয়ার

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের শাহাদাতবার্ষিকী আজ
ছবি: সংগৃহীত

আজ সেপ্টেম্বর, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫৪তম শাহাদাতবার্ষিকী। এই দিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী এই বীরকে, যিনি নিজের জীবন দিয়ে রচনা করে গেছেন বীরত্ব দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।

১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন যশোর জেলার নড়াইল থানার মহেশখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নূর মোহাম্মদ শেখ। শৈশবে মা-বাবা দুজনকেই হারিয়ে তিনি বড় হন নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। জীবিকার তাগিদে ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (বর্তমানে বিজিবি)- যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ওই বছরই দিনাজপুর সেক্টরের কুঠিবাড়ি ক্যাম্পে সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নেন তিনি। ১৯৭০ সালে বদলি হয়ে যান ইপিআরের যশোর সেক্টরে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার সময় নূর মোহাম্মদ ছুটিতে ছিলেন নিজ গ্রামে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে তিনি ছুটি শেষ হওয়ার আগেই কর্মস্থলে ফিরে যান। সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার কথা শুনে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণের সংকল্প দৃঢ় করেন।

সেক্টর কমান্ডার মেজর (পরবর্তীতে শহীদ) নাজমুল হুদার নির্দেশে আগস্ট মাসে নূর মোহাম্মদ শেখ একটি গেরিলা দলের সদস্য হিসেবে চৌগাছার ছুটিপুর গ্রামে প্রতিরক্ষা অবস্থানে যান।ৃ

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ চারজন সহযোদ্ধাসহ ছুটিপুরের নিকটবর্তী গোয়ালহাটি গ্রামে স্ট্যান্ডিং প্যাট্রল ডিউটিতে ছিলেন। তিন দিক থেকে হঠাৎ করে পাকবাহিনীর অতর্কিত হামলার মুখে পড়েন তারা।

সেই আক্রমণে সিপাহি নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলে, দলনেতা নূর মোহাম্মদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে উদ্ধার করেন এবং শত্রুর দিকে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। একপর্যায়ে নিজেও গুলিবিদ্ধ হন এবং মর্টারের আঘাতে তার হাঁটু ক্ষতবিক্ষত হয়।

তিনি সহযোদ্ধাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন এবং একা থেকে শত্রুর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন। আহত অবস্থাতেই একাধিক স্থানে অবস্থান পরিবর্তন করে গুলি চালিয়ে সহযোদ্ধাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুর্বল হয়ে পড়লে পাকিস্তানি সেনারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

প্রায় এক ঘণ্টা পর মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি দল পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে শত্রুপক্ষকে পিছু হটাতে বাধ্য করে। পরে একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয় নূর মোহাম্মদের ক্ষতবিক্ষত নিথর দেহ। তাঁর দেহে বেয়নেটের আঘাত এবং চোখ উপড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়, যা পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার জঘন্য উদাহরণ।

তাঁর মরদেহ শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে অসীম সাহসিকতা আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মানবীরশ্রেষ্ঠউপাধিতে ভূষিত করে।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ শুধু একজন সৈনিক ছিলেন নাতিনি ছিলেন বাঙালি জাতির সাহস, আত্মত্যাগ দেশপ্রেমের জীবন্ত প্রতীক। তাঁর মতো বীরদের আত্মাহুতি আজও আমাদের স্বাধীনতার মূল ভিত্তি।

এই দিনে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই মহাবীরকে, যিনি বলেছিলেন, আমার মৃত্যুই যদি দেশকে রক্ষা করে, তবে আমি তাতেই গর্বিত।



banner close
banner close