ছবি: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠককালে বিএনপি
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ন্যাশনাল কনসেন্সাস পার্টি (এনসিপি)। রবিবার (৩১ আগস্ট) রাতে রাজধানীর ‘যমুনা’তে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে পৃথক পৃথক এই বৈঠকে দলগুলো নির্বাচনের সময়সূচি, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, নুরুল হক নুরের ওপর হামলা এবং জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরে। জামায়াত ও এনসিপি জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে বিএনপি বলেছে, তারা কোনো দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে নয়।
নির্বাচন যথাসময়ে হবে:
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন—আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেউ যদি এই নির্বাচনের বিকল্প চিন্তা করে, তবে তা হবে জাতির জন্য 'গভীর বিপজ্জনক'।
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা। প্রধান উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, এই নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা নির্বাচন।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. আলী রীয়াজ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনির হায়দার। তারা জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার অগ্রগতি সম্পর্কে উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
নির্বাচন নিয়ে আশ্বস্ত, তবে হামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি বিএনপির:
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে, এ বিষয়ে আমরা আশ্বস্ত। তবে নুরুল হক নুরের ওপর হামলা গভীর উদ্বেগজনক। এর পেছনে একটি মহল নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।”
তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এটা তাঁর এখতিয়ার। এতে কোনো পক্ষপাতিত্ব হয়নি।”
বিএনপির অবস্থান:
নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিপক্ষে, জুলাই সনদের ব্যাপারে আগের অবস্থানে অটল, জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে সাড়া।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের প্রস্তাব জামাতের:
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে এখনো আমাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না।”
তিনি বলেন, “একটি দলের কারণে সনদের বাস্তবায়ন আটকে থাকতে পারে না। প্রয়োজন হলে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মত গ্রহণ করা হোক।”
জামায়াত নেতারা অভিযোগ করেন, লন্ডনে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে একতরফাভাবে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবে অসংগত।
জামায়াতের দাবি ও অবস্থান:
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া, গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত, জাপা নিষিদ্ধের পক্ষে মত।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন, মিয়া গোলাম পরওয়ার, রফিকুল ইসলাম খান, ডা. হামিদুর রহমান আযাদ।
গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধানের দাবি এনসিপির:
বৈঠক শেষে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “আমরা জুলাই সনদের ওপর ভিত্তি করে একটি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের সময় এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “নুরের ওপর হামলা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা। বিজনেস ও মিডিয়া এস্টাবলিশমেন্ট এবং সরকারের ভেতরের কিছু মহল পুরোনো কাঠামো ধরে রাখতে মরিয়া।”
এনসিপির অবস্থান ও প্রস্তাব:
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি, গুম কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, হান্নান মাসউদ ও তাসনিম জারা।
নুরের ওপর হামলায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত
গত শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর পুলিশের হাতে মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সরকার ইতোমধ্যে বিচার বিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক দল এ ঘটনার নিন্দা জানায় এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানায়।
আরও পড়ুন:
