সোমবার

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

গণভোট বা বিশেষ আদেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট, ২০২৫ ০৫:৫৮

আপডেট: ২৫ আগস্ট, ২০২৫ ০৬:২৫

শেয়ার

গণভোট বা বিশেষ আদেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন তীব্রতর হয়ে উঠেছে। একদিকে বিএনপি বলছে, আগামী নির্বাচিত সরকার সনদের বাস্তবায়ন করবে; অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি চাইছে, সংসদ নির্বাচনের আগেই সনদ কার্যকর হোক।

এই বাস্তবতায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশের শীর্ষ আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে। রবিবার (২৪ আগস্ট) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা গণভোট আয়োজন এবং বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি—এই দুইটি পথকে বাস্তবায়নের সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প হিসেবে সুপারিশ করেছেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, ড. শরিফ ভূঁইয়া ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।

কমিশনের পক্ষ থেকে সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও বৈঠকে অংশ নেন।

দুই বিকল্প পথের বিশ্লেষণ:

১. গণভোট:

গণভোটের মাধ্যমে জনগণ সরাসরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাবে, যা রাজনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেও এই গণভোট আয়োজন করা সম্ভব। তবে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে কিছু অনিশ্চয়তা ও কারিগরি জটিলতার কথাও উঠে এসেছে।

২. বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ:

জুলাই আন্দোলন ও জনগণের ত্যাগের প্রেক্ষাপটে সাংবিধানিক আদেশ জারির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এটি আদালতেও টিকতে পারে। তবে সংসদীয় সমর্থন ছাড়া এই পথও নিরাপদ নয়।

অধ্যাদেশের পথ বাতিল

আগে আলোচনা থাকলেও সংবিধান সংশোধনে অধ্যাদেশ জারি নিষিদ্ধ হওয়ায় এই বিকল্পটি সরিয়ে রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পথে এগোনো আইনগতভাবে সম্ভব নয়।

আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সনদের কোন কোন প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওনকে বিশেষ পরামর্শক হিসেবে ছয় মাসের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।

কমিশনের একাধিক সদস্য ও বিশেষজ্ঞ একমত হয়েছেন যে, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের একমাত্র পথ রাজনৈতিক ঐকমত্য। তাঁরা একাদশ সংশোধনের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, দলসমূহের সম্মতিতেই সেই সময় বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি করা হয়, যা আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়নি।

কমিশনের একজন সদস্য মন্তব্য করেন,

“রাজনৈতিক দলগুলো যদি এবারও ঐকমত্যে না আসে, তবে জাতির সামনে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা অপেক্ষা করছে।”

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এখন এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে। আইনি প্রক্রিয়া যতই থাকুক, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ঐকমত্য ছাড়া এই সনদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলেই মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা



banner close
banner close