রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

তারেক রহমান’কে গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড বানানো প্রথম আলোর মুজিব-বন্দনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট, ২০২৫ ১২:১৮

আপডেট: ১৬ আগস্ট, ২০২৫ ১২:২০

শেয়ার

তারেক রহমান’কে গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড বানানো প্রথম আলোর মুজিব-বন্দনা
প্রথম আলোর লোগো।

প্রথম আলো। দেশের প্রথম সারির একটি গণমাধ্যম। তবে, প্রথম সারিতে আসার নেপথ্যে রয়েছে দেশের আলেম ওলামাদের জঙ্গি, দেশের শত্রু হিসেবে পরিচিত করা এবং ভারত ও আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশন হয়ে কাজ করার এক দীর্ঘ ইতিহাস।

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট শেখ হাসিনার পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলার দায় দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল মতিউর রহমান সম্পাদিত এই পত্রিকাটি। কোন ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকলেও তারেক রহমানকে এ হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সহায়ক হিসেবে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার শুরু করে প্রথম আলো।

চার সালের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা এমনভাবে সাজানো হয় যাতে শেখ হাসিনার কোন ক্ষতি না হয় এবং তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে যাতে নিয়ে যাওয়া যায় বিতর্কের কেন্দ্রে। মূলত আওয়ামী নেতৃত্বেই রাজনৈতিভাবে করুণ অবস্থা কাটাতে, দেশে একটি চরম অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করার মাধ্যমে জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন অর্জনই ছিল এই হামলার মূল লক্ষ্য।

২০১৮ সালে প্রথম আলোতে মতিউরের লেখা একটি মন্তব্য প্রতিবেদন দেখলেই তাঁর আওয়ামী বন্দনার চিত্র ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। ওই প্রতিবেদনে মতিউর উল্লেখ করে, ২১ আগস্টের ঘটনার পর থেকে, প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধানে বহু নতুন তথ্যসহ প্রায় পুরো ঘটনা নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক তত্পরতার বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছিল। জোট সরকার জেনেশুনে যে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রকৃত আসামিদের আড়াল করার চেষ্টা করেছিল, তদন্তকে উল্টোপথে পরিচালনা করেছিল-সেসব তখনই প্রথম আলোতে তুলে ধরে দেশবাসীকে জানিয়েছিল। কার্যত ওই সময়টায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করাই ছিল প্রথম আলোর মূল পরিকল্পনা।

মুফতি হান্নানসহ ইসলামপন্থী নেতাকর্মীদের জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে এবং বিএনপ-জামায়াত জোট সরকারকে নিয়ে অনুসন্ধানের নামে নানা ধরনের সাজানো প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে প্রথম আলো। ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট পুরো চার পৃষ্ঠার বিশেষ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল প্রথম আলো। এর আগে ২০০৫,২০০৬ ও ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগের পূর্ব-পরিকল্পিত এই ভয়ংকর হামলা নাটককে পূর্ণতা দিতে অনেক বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম-আলো।

বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে নানা ধরনের সরকার বিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে আওয়ামী প্রেমী এই পত্রিকাটি। “জঙ্গিদের মদদদাতা বিএনপির আট মন্ত্রী সাংসদ”, “অভিজাত এলাকায় এবার বিএনপি পল্লি”, “১০০ প্লটের ৮৪টিই পেলেন বিএনপির মন্ত্রী সাংসদরা” সহ বিভিন্ন ধরনের মনগড়া শিরোনামে পূর্ণ হত প্রথম প্রথম আলোর প্রথম পাতা।

এছাড়াও ২য় মেয়াদে খালেদা জিয়ার শাসনামল নিয়েও নানা ধরনের অপপ্রচার চালায় প্রথম-আলো । তাদের প্রকাশিত একটি প্রধান শিরোনামে লেখা হয়, “দ্বিতীয় মেয়াদে খালেদা জিয়া বেপরোয়া হয়ে ওঠেন”।

এদেশের মুসলিমদের কোণঠাসা করে রাখতে চাওয়া প্রথম-আলো গণ-অভ্যুত্থানের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের শুরু করেছে মুজিব বন্দনা। ১৯৭৫ সালে সেনা বিদ্রোহে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, এ ইতিহাস কারো অজানা না হলেও গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে জোর করে শেখানো হয়েছে মুজিব বন্দনা। সেই বন্দনার ধারাবাহিকতা রাখতেই ২০২৫ সালের এই দিনেও মুজিব ও তার পরিবারকে নিয়ে এক আবেগ-মিশ্রিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। যার শিরোনামে লেখা হয়েছে, আজ ১৫ আগস্ট্‌ বঙ্গবন্ধু হত্যার ১৫ বছর।

১৯৭৫ সালের এই দিনে সারাদেশে আনন্দের ছড়াছড়ি চললেও প্রথম-আলো ও ডেইলি স্টারসহ দেশের অনেক গণমাধ্যম সেই ইতিহাস প্রকাশ না করে ঢালাও ভাবে মুজিব বন্দনায় মত্ত।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিবিএস নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এদিন ঢাকায় ছিলনা কোন প্রতিবাদ, ছিলনা কোন প্রতিক্রিয়াও। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছিল কিছুই হয়নি। সবকিছু চলছিল অন্যান্য সাধারণ দিনগুলির মতই। কারণ, ওই সময়ে তিনি দেশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি দেশকে অর্থনৈতিক বিশৃক্ষলার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। নতুন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মুশতাক আহমেদ জনগনকে একটি সৎ সরকারের প্রতিজ্ঞা করেছেন।

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ -কে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ছবি প্রকাশ করে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আবেগ নিয়ে এক নোংরা খেলায় মেতে উঠেছিল। অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইলিয়াছ হোসাইন তার এক ভিডিও ডকুমেন্টারিতে দাবি করেন, ভারতে বসেই পরিচালিত হয় বাংলাদেশের প্রভাবশালী এই পত্রিকাটি। এসময় বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রের কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন সাংবাদিক ইলিয়াছ। বিডিয়ার বিদ্রহ নিয়ে ভারত ও হাসিনার নাটকের সত্যতা উন্মচিত হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রথম আলোর আওয়ামী প্রীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও। বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছাপানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল পত্রিকাটি ।

এদিকে, প্রথম আলোর বিরুদ্ধে সংবাদ অতিরঞ্জিত করার অভিযোগ করেছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরও । এই সাংবাদিক তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের এক পোস্ট-এ লিখেছেন, প্রথম আলোর ক্লিকবেইট টাইপ অপসাংবাদিকতা এক প্রকার নোংরামি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করার পর সেই ছবি যুক্ত করে ওই পোস্ট দেন সায়ের। এসময় তাদের বিরুদ্ধে প্রথম আলো নেতিবাচক ন্যারিটিভ তৈরি করছে বলে অভিযোগ করে আল-জাজিরার এই সাংবাদিক।

দেশের আলেম সমাজও প্রথম আলোর এই অপতৎপরতা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন । গত বছরের পাঁচ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অপসাংবাদিকতার প্রতিবাদে প্রথম আলোর অফিসও ঘেরাও দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

এছাড়া, গত ঈদে প্রথম আলোর প্রকাশিত কুকুরের ছবি সংবলিত এক ছবিতে স্পষ্ট ধর্ম অবমাননার বিষয়টি ফুটে উঠলে ফের ক্ষোভে ফেটে পরে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। এনিয়ে একটি মামলাও হয়েছে।

এখনও দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আওয়ামীপন্থী পত্রিকা প্রথম আলো। তবে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না কোন ধরনের ব্যবস্থা। তাই, সাধারণ মানুষের দাবি, প্রথম আলোর বিরুদ্ধে যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং সব ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে যাতে নেয়া হয় কার্যকর ব্যবস্থা।

ভিডিও লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=DXValPzJDfI



banner close
banner close