গতবছর সাত আগস্ট আয়নাঘরে আট বছর গুম থাকার পর মুক্ত হন সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। মুক্তির এক বছরে বন্দিশালায় কাটানো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ‘’বিভীষিকাময় আয়নাঘর’, ‘ফ্যাসিবাদের গোপন কারাগারে ২৯০৮ দিন’ নামে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘মহানগর পাবলিকেশনের’ আয়োজনে মোড়ক উন্মোচন করেন আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী,বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা,সাংবাদিকসহ আযমী পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট গুমের শিকার হন আযমী। গুম থেকে তার মুক্তি পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছর দুশ্চিন্তায় পার করেছে তার পরিবার। সহ্য করতে হয়েছে অবর্ণনীয় মানসিক নির্যাতন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আয়নাঘরের দুর্বিসহ সময়ের কথা বর্ণনা করেছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল হাসিনুর রহমান। আযমীকে তার পাশের কক্ষে দেখেছেন তিনি। তাই, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে তাকে মুক্ত করতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন হাসিনুর। এসময় তিনি আরও বলেন, অতীতের মতো ফ্যাসিবাদ আগামীতে দেখতে চাই না সাধারণ মানুষ।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজ বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে ক্রসফায়ার ও গুম ছিল দেশের নিয়মিত ঘটনা। ফ্যাসিস্টের রোষানলে আযমীকে গুম থাকতে হয়েছে দীর্ঘ বছর।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলের নানা নির্যাতনের স্মৃতীচারণ করে বক্তব্য দেন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি তার বক্তবে খুনী হাসিনার শাসনামলে কারাভোগ থেকে শুরু করে আয়নাঘরে বন্দি থাকা নানা অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। আযমীর লেখা বইটি শেখ হাসিনার দুঃশাসনের দালিলিক প্রমান হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘বিভীষিকাময় আয়নাঘর’ বইয়ের লেখক আযমী তার বক্তব্যে বলেন, আয়নাঘরে থাকা অবস্থায় কখনো কল্পনা করতে পারেননি তিনি আবার মুক্ত বাতাসে ঘুরতে পারবেন। আয়নাঘরে বন্দি থাকায় ২৪এর গণুভ্যূত্থানে অংশীদার হতে না পারার আক্ষেপ জানিয়ে এই লেখক বলেন, আগামীতে দেশের প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের অতিথিরা আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর মেধা,সাহসীকতা ও দেশপ্রেমসহ প্রশংসা করেন। সেই সাথে ফ্যাসিস্ট শাসনামলে তার জীবনে ঘটে যাওয়া অত্যাচার অবিচারের কথাও তুলে ধরেন। একইসাথে ওই সময়ে, আযমীর মুক্তির জন্য কোনো পদক্ষেপ না নিতে পারার ব্যার্থতার কথাও জানায় বক্তারা।
হাসিনার আয়নাঘরে বন্দি ছিলো আযমীর মতো দেশপ্রেমী অসংখ্য মানুষ। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যূত্থানের পর আয়নাঘর থেকে মুক্ত হয়েছে সব বন্দি। তাদের মতে জুলাই আন্দোলনে নতুন করে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের, সেই সাথে তারাও পেয়েছে নতুন জীবন।
আরও পড়ুন:








