মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

বকেয়া আট হাজার কোটি টাকা, চট্টগ্রামে কয়লা খালাস বন্ধ চার জাহাজে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ আগস্ট, ২০২৫ ১০:৩৮

আপডেট: ৭ আগস্ট, ২০২৫ ১০:৪১

শেয়ার

বকেয়া আট হাজার কোটি টাকা, চট্টগ্রামে কয়লা খালাস বন্ধ চার জাহাজে
ছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দরে কয়লা খালাসে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) প্রায় আট হাজার কোটি টাকার বকেয়ার কারণে। পায়রা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা দুই লাখ ৩২ হাজার টন কয়লা নিয়ে চারটি জাহাজ বন্দরে এসে নোঙর করলেও পণ্য খালাস শুরু হয়নি।

চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থিং তথ্য অনুযায়ী, ১৯ জুলাই থেকে একে একে এমভি কারমেনসিটা (৫৭,২৭০ টন), এমভি বিগ গ্লোরি (৬০,০০০ টন), এমভি ক্লারা (৫৫,১০০ টন) এবং এমভি থিয়োডরি ভেনিয়ামিস (৬০,০০০ টন) কয়লা নিয়ে বন্দরে এসেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ ১৮ দিন ধরে অপেক্ষায়। প্রতিদিন এসব জাহাজকে প্রায় ৬০ হাজার ডলার করে ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে, যা এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ ডলার (সাড়ে ছয় কোটি টাকা)। এই ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করা হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই।

পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) জানিয়েছে, পিডিবি বকেয়া পরিশোধে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও অর্থ সংকটে তারা তা দিতে পারছে না। শুধু লাইটার জাহাজ মালিকদের কাছেই বকেয়া প্রায় ৭২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এ খাতে বিদেশি ও দেশি পক্ষগুলোর কাছে বিসিপিসিএলের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা।

বিসিপিসিএলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কয়লা খালাসে ব্যয়বহুল লাইটার জাহাজের খরচও সামলাতে পারছে না তারা। ফলে লাইটার মালিকরাও জাহাজ দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। এতে বিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়লা সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগাম সপ্তাহে আরও তিনটি কয়লা বহনকারী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে বলে জানানো হয়েছে।

পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, অর্থ সংকটের কারণে বিদেশি সরবরাহকারী ও দেশি লাইটার মালিকদের পাওনা নিয়মিত পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না। তবে জরুরি প্রয়োজন হলে চিঠির মাধ্যমে কিছু অর্থ দেওয়া হয়। চট্টগ্রামে কয়লা খালাস বন্ধের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।

তবে বিসিপিসিএলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কয়লার জাহাজ আসা, খরচ এবং অন্যান্য তথ্য নিয়মিত পিডিবিকে জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পিডিবির বোর্ডের পরিচালক হওয়ায় আলাদা চিঠি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ছয় মাসের ঋণচুক্তিতে কয়লা পাঠাচ্ছে। তারা বারবার তাগাদা দিলেও এখনও সরবরাহ বন্ধ করেনি। তবে যেকোনো সময় সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

বিসিপিসিএলের হিসাব বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোয়াল্লেম হোসেন জানান, সর্বশেষ জুলাই মাসে পিডিবি ৩০০ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও সামগ্রিক বকেয়া প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে কয়লা আসার পরও খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না।

জাহাজ মালিকদের সংগঠন শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, কয়লা নিয়ে আসা জাহাজগুলো আকারে বড় হওয়ায় দৈনিক খরচও বেশি। দীর্ঘ সময় খালাস না হওয়ায় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে, যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ঘাড়েই পড়বে।

চট্টগ্রাম বন্দরে এই অচলাবস্থা নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় ও সমন্বয়ের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা, নইলে দেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প কয়লা সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।



banner close
banner close