
কোরবানীর ঈদের পর আবারো আলোচনায় এসেছে দেশের চামড়াশিল্প। ঈদের আগেই কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণসহ সরকারের পক্ষ থেকে চামড়া সংরক্ষনের জন্য দেশের মাদ্রাসাগুলোতে ফ্রিতে লবন সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও পশুর চামড়ার সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। তবে সেগুলো কোনো কাজে আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন ট্যানারি সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে এবারো কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চরম বিপাকে ব্যবসায়ীরা।
সোমবার খবর নিয়ে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও কমে বিক্রি হচ্ছে গরু ও ছাগলের চামড়া। রাজধানীসহ বিভাগীয় অনেক শহরের সড়কে চামড়া পড়ে থাকলেও ক্রেতাদের দেখা মিলছে না। কোরবানিদাতারা মসজিদ-মাদ্রাসায় যে চামড়া দান করছেন সেগুলোও পানির দরেই বিক্রি করছেন তারা।
গরুর চামড়া ঢাকায় গড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে সরকার ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩৫০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। গতবছরের মতো এবারো ছাগলের চামড়ার চাহিদা নেই বললেই চলে। ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে ছাগলের চামড়া বিক্রি হওয়ায় অনেকেই চামড়া ফেলে দিয়েছেন বলে জানা যায়। চামড়ার দাম কম থাকায় লোকসানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দাম কম হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়া শিল্পে বাংলাদেশের একমাত্র রফতানিকারক দেশ চীন। অন্য কোনো রফতানী বাজার না থাকায় চীন নানাভাবে এ সুযোগ কাজে লাগয়। তারা নানা অজুহাতে চামড়ার ন্যায্যদাম দয় না। যে কারণে এবছরও চামড়ার দামে দরপতন হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোথাও সরকার নির্ধারিত দরে চামড়া বিক্রি হয়নি। গত বছরের দরেই গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। কোরবানিদাতাদের থেকে আকারভেদে প্রতি পিস চামড়া সর্বোচ্চ ২শ থেকে ৫শ টাকায় কিনেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তারা সেই চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৬শ থেকে ৯শ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া কেনায় ব্যবসায়ীদের কোনো আগ্রহ নেই বলেই জানা গেছে।
সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বাংলা এডিশনকে বলেন, চীন ছাড়া চমড়া রফতানির বাজার না থাকায় তারা কাঙ্খিত বাজারদাম দেয়না। যে কারণে ট্যানারি মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই ক্ষতির প্রভাবে বাংলাদেশের চামড়া ব্যবসা প্রায় ধ্বংস পথে।
সরকারের পক্ষ থেকে চামড়া সংরক্ষনের জন্য মাদ্রাসাগুলোতে লবন দিয়েছেন ও পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছেন উল্ল্যেখ করে এই ব্যবসায়ী বাংলা এডিশনকে জানায়, সরকার চীনের পাশাপাশি ইউরোপের বাজারে চামড়া রফতানির দিকে নজর দিলে সম্ভাবনাময় এই খাত আবার মাথা তুলে দাড়াবে।
চামড়াশিল্পের ওপর চীন একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রন নিয়ে বাংলাদেশের চামড়াশিল্পকে দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে দাবী করেন চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।
চামড়ার বাজার বহুমুখী করণ করার কথা জানিয়ে বাংলা এডিশনকে ট্যানারি সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘বাংলাদেশ চামড়া শিল্প নগরীর পরিবেশগত উন্নয়ন ঘটিয়ে ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে দিলে দেশের বাজারে চামড়ার দাম বাড়বে।’ সাভারের হেমায়েতপুরের ২শ একর জমিতে গড়ে ওঠা চামড়াশিল্প নগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় পাশের ধলেশ্বরী নদী দূষণের শিকার হচ্ছে। বর্জ্য পরিশোধনাগারের উন্নয়ন সহ ইউরোপের সঙ্গে ব্যবসার উপযোগী পরিবেশ তৈরি হলে চামড়া শিল্প আলোর মুখ দেখবে বলে বাংলা এডিশনকে জানান হরিণধরা কাঁচা চামড়া আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. আব্দুল আজিজ।
সোমবার সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত এই চামড়াশিল্প নগরীতে গিয়ে চামড়ার বিভিন্ন ট্যানারি পরিদর্শন করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। সে সময় তিনি চামড়া সংরক্ষনসহ স্থানীয় মাদ্রাসাগুলোতে চামড়া রক্ষনাবেক্ষনও পরিদর্শন করেন।
আরও পড়ুন: