
গত ১৮ মে সাংবাদিক ইলিয়াছ হোসাইনের ইউটিউব চ্যানেল এবং বাংলা এডিশনে প্রকাশিত হয় কোম্পানি শেয়ার জালিয়াতি এবং একটি হত্যাজনিত ঘটনার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়, ট্রান্সকম গ্রুপের বর্তমান এমডি সিমিন রহমান শেয়ার জালিয়াতি এবং ভূয়া পারিবারিক ডিড অব সেটেলমেন্টের মাধ্যমে সম্পত্তি জবর দখল করেছেন। একইভাবে, জালিয়াতি প্রক্রিয়াকে প্রত্যক্ষভাবে মদদ দেয়ায় উঠে আসে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের সম্পাদক মতিউর রহমান ও মাহফুজ আনামের পক্ষপাতিত্বের বিষয়টিও। এছাড়া, সিমিন রহমানের বড় ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমান রিয়াজের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে বেশ কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরা হয় অনুসন্ধানে।
বিস্তারিত লিংকে : https://www.youtube.com/watch?v=kj0Leoca2OY
অনুসন্ধানী ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর, শেয়ার জালিয়াতি, ভূয়া পারিবারিক ডিড এবং হত্যা মামলা নতুনভাবে মোড় নিয়েছে। তবে একইসঙ্গে, এসব মামলার বাদী শাযরেহ হক এবং তাঁদের পরিবারের ওপর হামলা করা হয়েছে, দেয়া হয়েছে হুমকি। এই অবস্থায়, নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠেছে শাযরেহ হক ও তার পরিবারের।
ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমান মারা যান ২০২০ সালে। তিনি মারা যাওয়ার পর, সিমিন রহমান দাবি করেন, তার বাবা লতিফুর একটি পারিবারিক ডিড অব সেটেলমেন্ট করে গেছেন। তবে, সিমিন দাবি করলেও, লতিফুরের অন্য দুই সন্তান আরশাদ ওয়ালিউর রহমান এবং শাযরেহ হক অস্বিকার করেন বিষয়টি। তাঁদের দাবি ছিলো, স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সিমিন নিজেই নাটক সাজিয়েছেন ডিডের।
এই অবস্থায়, পারিবারিক ডিডে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ এনে সিমিন রহমানকে এক নাম্বার আসামী করে ঢাকার গুলশান থানায় একটি মামলা করেন শাযরেহ হক। এছাড়া, মামলার দুই নাম্বার আসামী করা হয়, শাযরেহ হকের মা ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমানকে। পরে, মামলার তদন্তের স্বার্থে শাহনাজ রহমানের ট্রান্সকমের অফিস কক্ষ থেকে, সাদা পাতায় স্বাক্ষরিত ডিড অব সেটেলমন্টের নথী উদ্ধার করে পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা। সেই ধারাবাহিকতায়, তদন্তকারী কর্মকর্তা উদ্ধারকৃত নথীর স্বাক্ষরের সঙ্গে শাযরেহ হক ও অন্যান্যদের স্বাক্ষর পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন আদালতে। এক্ষেত্রে, বাদী পক্ষের ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের স্বাক্ষর এবং আদালতে উপস্থিত হয়ে তাঁদের নমুনা স্বাক্ষর সংগ্রহের অনুমতি চান তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে, নমুনা স্বাক্ষর সংগ্রহের আবেদন অগ্রাহ্য করে, বাদীপক্ষের ব্যবহৃত ব্যাঙ্কের স্বাক্ষরের সঙ্গে উদ্ধারকৃত স্বাক্ষর যাচাইয়ের জন্য সিআইডি রমনা শাখাকে আদেশ দেয় আদালত।
গত পাঁচ মে ডিড জালিয়াতি মামলার বাদী শাযরেহ হক, স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে, নমুনা স্বাক্ষর প্রদানের আবেদন করেন আদালতে। এই অবস্থায়, সিএমএম ৩ নম্বর আদালতের বিচারক শুনানির মাধ্যমে গত ২৯মে মঞ্চুর করেন শাযরেহ হকের আবেদন। আগামী ১৩ জুলাই, আদালতে উপস্থিত হয়ে শাযরেহ হক এবং তার দুই সন্তানের নমুনা স্বাক্ষরের দিন ধার্য করেছেন বিচারক মোঃ জিয়াদুর রহমান।
অন্যদিকে, গুলশান থানায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন, শাযরেহ হক। ওই মামলায়, শাযরেহ হকের ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমান হত্যার এক নাম্বার আসামী করা হয় তাদেরই আরেক বোন সিমিন রহমানকে। তদন্তকারী কর্মকর্তার, চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর ভর করে মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত। তবে, শাযরেহ হকের অভিযোগ ছিলো, তার দেশের বাইরে থাকার সুযোগে প্রভাব খাটিয়ে হত্যা মামলাটি দ্রুত খারিজের ব্যবস্থা করেন সিমিন রহমান। ফলে, মামলাটি আদালত খারিজ করে দিলেও না রাজি দেয়ার সুযোগ পাননি শাযরেহ।
এই অবস্থায়, রিয়াজ হত্যা মামলা খারিজের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন দায়ের করেন বাদী পক্ষ। রিভিশনে, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কোর্টে মামলাটির পুনঃতদন্ত চেয়ে আবেদন জানায় শাযরেহ হক। শুনানির পর, বিচারক বাদীর আবেদন মঞ্জুর করে তাকে না-রাজির অনুমতি দেন। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী, ১৩ জুলাই।
এছাড়া, জালিয়াতি করে ট্রান্সকমের শেয়ার বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগে উচ্চ আদালতে আলাদাভাবে মামলা দায়ের করেছেন, লতিফুর রহমানের ভাই সাইফুর রহমান এবং শাযরেহ হক। মামলায়, ট্রান্সকমের বাকী পরিচালকদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। ট্রান্সকমের পরিচালকদের মধ্যে, সাইফুর রহমান এবং শাযরেহ হক ছাড়াও, শাহনাজ রহমান, সিমিন রহমানসহ আরো দুইজন রয়েছেন। কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর ৪৩ ধারার অধীনে, সাইফুর রহমান এবং শাযরেহ হকের আবেদনের প্রেক্ষিতে, শুনানীর পর মামলা গ্রহণ করেন হাইকোর্ট বিভাগের কোম্পানি বিচারক, খিজির আহমেদ চৌধুরী। পাশাপাশি, ট্রান্সকম লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডারদের আগামী তিন মাস পর্যন্ত তাদের শেয়ার স্থানান্তর থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন বিচারপতি খিজির আহমেদ।
তবে, গত ২০ মে কোম্পানি আইনে বিচারক মামলা গ্রহণ করার পরপরই, বাদীপক্ষের ওপর হামলা হয় কোর্ট প্রাঙ্গণেই। ঘটনার আকস্মিকতায় ভীত হয়ে পড়েন বাদী, শাযরেহ হক। এরপর থেকেই, নানাভাবে হুমকি পেয়ে আসছে বাদীপক্ষ।
ট্রান্সকম গ্রুপের মালিকানাধীন পত্রিকা হলেও, নিজেদের ঘরের বিষয়টির সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখছে না প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার। ট্রান্সকমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মিডিয়া স্টারের আওতাধীন রয়েছে প্রথম আলো। আর, মিডিয়া স্টারের একজন পরিচালক হওয়া সত্বেও, নিজের সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে প্রথম আলোর কার্যকারিতা না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন শাযরেহ হক।
একইসঙ্গে, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার বুলি আওড়ালেও, পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রকাশ করে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার। মালিকপক্ষের একজন হওয়া সত্বেও এমন অভিযোগ তুলে ধরেন শাযরেহ হক।
সংবাদমাধ্যমের অবৈধ শক্তির কালো থাবা থেকে মুক্তির মাধ্যমে, নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সুষ্ঠু সমাধান পাবেন, এমন আশা প্রকাশ করেন শাযরেহ হক। এছাড়া, ভাই হত্যার সঠিক বিচার পাওয়ার পাশাপাশি, ব্যক্তিগত জীবনের নিরাপত্তা দাবি তার। যে নিরাপত্তা ইতোমধ্যেই, ব্যঘাত ঘটেছে শাযরেহ ও তার পরিবারের।
আরও পড়ুন: