রবিবার

১ জুন, ২০২৫
১৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
৩ জিলক্বদ, ১৪৪৬

ডিসেম্বরে নির্বাচন শুধু একটি দলই চায়: প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩০ মে, ২০২৫ ০৭:০২

শেয়ার

ডিসেম্বরে নির্বাচন শুধু একটি দলই চায়: প্রধান উপদেষ্টা
ডিসেম্বরে নির্বাচন শুধু একটি দলই চায়: প্রধান উপদেষ্টা।

বাংলাদেশের সব দল নয়, মাত্র একটি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন চায় বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাপানের রাজধানী টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে ৩০তম নিক্কেই ফোরামে ‘ফিউচার অব এশিয়া’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, আমার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। মানুষের ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা, মর্যাদা নিশ্চিত এবং গণতন্ত্র মসৃণ রূপান্তরের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন- এ তিনটি দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকার পালন করবে এমনটা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে কি-না, তা নির্ভর করছে সংস্কার কতটুকু সম্পন্ন হয়, এর ওপর। ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়া নিয়ে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলই বলছে, কিন্তু সব দল নয়। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর। ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে গেলে তাড়াহুড়ো করে সংস্কার করতে হবে। ভালো করে সংস্কারের জন্য ডিসেম্বরের পর আরও ৬ মাস প্রয়োজন। নির্বাচিত দলের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাই। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা এ সরকারের মূল লক্ষ্য দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা।

তিনি বলেন, আমরা এক গভীর অনিশ্চিত সময় পার করছি। আমরা এমন একটি বিশ্বকে প্রত্যক্ষ করছি যেখানে শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে, উত্তেজনা বাড়ছে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা সবসময় নিশ্চিত থাকছে না। এশিয়া ও তার বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে এবং শান্তি দিন দিন অধরা হয়ে উঠছে। ইউক্রেন, গাজা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যুদ্ধ ও মানবসৃষ্ট সংঘাত হাজারো মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস করে দিচ্ছে।

আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ এক নির্মম রূপ নিয়েছে এবং সাম্প্রতিক ভূমিকম্প এর গভীর মানবিক সংকটকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।

ড. ইউনুস বলেন, সম্প্রতি আমাদের দুই প্রতিবেশীর মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যয়বহুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা কোটি কোটি টাকা যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করছি, অথচ লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে বা ন্যূনতম চাহিদার জন্য লড়াই করছে। এ সময় তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য উভয় দেশের নেতাদের ধন্যবাদ জানান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সহাবস্থানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ বেড়ে যাওয়ায় মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার ভিত্তি চ্যালেঞ্জের মুখে এবং আর্থিক বৈষম্য সমাজে বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন বিভাজনের কারণে অসন্তোষ ও অস্থিরতা দেখা গেছে, যা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ডেকে এনেছে। বহুমুখী অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে।

বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল এশিয়া অনিশ্চয়তার কেন্দ্রস্থলে, একই সঙ্গে সম্ভাবনারও কেন্দ্রে। আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো বিশাল, কিন্তু আমাদের সম্মিলিত শক্তিও বিশাল। এ বাস্তবতায়, আমি বিশ্বাস করি এশিয়ার সামনে একটি সুযোগ, এমনকি একটি দায়িত্ব রয়েছে ভিন্ন পথ দেখানোর : শান্তির, সংলাপের, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের। শুধু সংখ্যাগত নয়, মানুষের কল্যাণ, আস্থা ও আশার উন্নয়ন।

তিনি আরও বলেন, এশিয়ার ভবিষ্যৎ কেবল অর্থনীতি বা ভূরাজনীতির বিষয় নয়, এটি মানুষের, ভাবনার এবং সাহসের বিষয়। ভয়ের দ্বারা নয়, সম্ভাবনার দ্বারা; শক্তির দ্বারা নয়, উদ্দেশ্যের দ্বারা পরিচালিত হই। চলুন, একটি উত্তম বিশ্বের কল্পনা করতে সাহসী হই। চলুন, একে অপরের প্রতি আস্থা রাখি। চলুন, শুধু প্রয়োজনীয়তার কারণে নয়, বরং আন্তরিক ইচ্ছে থেকে একে অপরকে সহযোগিতা করি। এশিয়ার ভবিষ্যৎ এখনো লেখা হয়নি-আমরাই তা একসঙ্গে লিখব। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও জাপান একসঙ্গে কাজ করে এশিয়ার ভাগ্য এমনকি বিশ্বের ভাগ্যও পুনর্লিখন করতে পারে।

banner close
banner close