
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনকে কেন্দ্র করে, গত সপ্তাহে টালমাটাল এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছে পদত্যাগ করবেন না ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর, রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় আলোচনায় বসেন মুহাম্মদ ইউনূস। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দলের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এসময়, প্রধান উপদেষ্টার কাছে নিজেদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনী রোডম্যাপ, সংস্কার, আওয়ামী লীগের বিচারসহ একাধিক দাবী জানান তারা।
অন্যদিকে, ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যেই, তাকে পূর্ণ সমর্থন দেয় সাধারণ জনগণ।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই, অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখায় একটি প্রস্তাব দেয় জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদ। প্রস্তাবনায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার আলোচনা উঠে আসে।
রবিবার, ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত আগামীর জাতীয় সরকার’শীর্ষক এক নাগরিক মতবিনিময় সভায় এই প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক মো. নাজিমুল হক। এছাড়া, মতমিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, আইনজীবী এবং ব্যবসায়ীরাও।
সভায় উত্থাপিত প্রস্তাবে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের সম্ভাব্য কাঠামো তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি এবং তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার বাইরেও আরো কয়েকটি গুরুপূর্ণ পদ নিয়েও আলোচনা করা হয়। মতবিনিময়ে, ড. বদিউল আলম মজুমদারকে উপ-রাষ্ট্রপতি, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব করা হয়।
পাশাপাশি, মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী পর্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী শ্রেণির অংশগ্রহণে একটি আনুপাতিক কাঠামোও প্রস্তাব করা হয়। মন্ত্রিসভায় বিএনপি ২৫ শতাংশ, জামায়াতে ইসলাম ২০ শতাংশ, এনসিপি ১৫ শতাংশ, ইসলামী আন্দোলন ৫ শতাংশ, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও পেশাজীবীরা ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য ২৫ শতাংশের প্রস্তাব দেয়া হয় সভায়।
মতবিনিময় সভায়, বক্তারা বলেন, এ ধরনের কাঠামোর ভিত্তিতে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন করে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা গঠন করা সম্ভব। এতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপ-রাষ্ট্রপতি ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দায়িত্ব ও ক্ষমতার ভারসাম্য রেখে স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ কমিয়ে আনা যাবে বলেও, আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা।
এছাড়া, কাঠামো চূড়ান্ত করতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাধারণ নাগরিকদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান করা হয়। প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারে শাসকদের জনগণের সেবক হিসেবে তুলে ধরা হয়।
জাতীয় সরকারের এই রূপরেখা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। বাংলা এডিশনকে কেউ কেউ বলছেন, এই মূহুর্তে প্রয়োজন নেই এই সরকারের। ড. ইউনূস ভালো করছেন। আবার, অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় সরকারের রুপরেখাকে।
জাতীয়, অন্তর্বর্তী, নির্বাচিত যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক সাধারণ মানুষ দেশের উন্নতির দাবী জানিয়েছেন। যেন, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বসবাস করতে পারেন বাংলাদেশে।
আরও পড়ুন: