শনিবার

২৪ মে, ২০২৫
১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
২৬ জিলক্বদ, ১৪৪৬

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন,নির্বাচন নিয়ে চাপে ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৪ মে, ২০২৫ ১০:১৮

শেয়ার

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন,নির্বাচন নিয়ে চাপে ড. ইউনূস
ড. ইউনূস

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন গত আগস্টে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়। এরপর বাংলাদেশের লাখো মানুষ গণতন্ত্র ফিরে পাবার আকাঙ্ক্ষা লালন করেছিলেন।

এরপর অন্তর্বর্তী সরকার ৯ মাস পার করলেও সবাইকে হতাশ করেছে, বিশেষ করে যারা দ্রুত নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। এখন দেশটির নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস হুমকি দিচ্ছেন, যদি তাকে কাজ করতে এবং ধীরগতিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ না দেয়া হয়, তাহলে পদত্যাগ করবেন।

আন্তর্জাতি মহলে সম্মানিত ড. ইউনূসকে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু গুছিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেরা সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তাকে যখন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আনা হয়, তখনো দেশে রক্তপাত চলছিল।

কিন্তু তাঁর সহযোগীরা বলছেন, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিকাশমান ঐক্যের কারণে তিনি বাধা অনুভব করছেন। এই ঐক্য তার নীতির সমালোচনা করছে। তারা বলছেন, তিনি নির্বাচন পরিকল্পনায় ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছেন।

২২ মে ড. ইউনূস বাধাহীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন না পেলে পদত্যাগের হুমকি দেন।

মুহাম্মদ ইউনূস তার পদত্যাগ ঘোষণার ভাষণ তৈরির পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছিলেন বলে তার সরকারের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তখন অন্য উপদেষ্টারা তাকে বোঝান, তার পদত্যাগে দেশ আরও অস্থিতিশীল হবে। ওই কর্মকর্তা ফোনে জানান, এ বছর নির্বাচন হওয়া উচিত বলে সেনাপ্রধান সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে অসন্তুষ্ট হয়েছেন ড. ইউনূস। একই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমালোচনায় তিনি বিপর্যস্ত বোধ করছেন।

হাসিনার পুরোনো রাজনৈতিক বিরোধীরা যেকোনো নির্বাচনে জয় পাওয়ার অবস্থায় রয়েছেন। নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সেই সম্ভাবনা তত বেশি। হাসিনার দল আওয়ামী লীগ লাঞ্ছনার মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে দেশে অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই।

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলারও অবনতি ঘটেছে। আর এটি নিরসনের উদ্যোগগুলোও অগোছালোভাবে চলছে। সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে থাকা মুহাম্মদ ইউনূসের নিজের কোনো রাজনৈতিক সমর্থন নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো মোবাশ্বার হাসান বললেন, ‘ড. ইউনূস চমৎকার ব্যাংকার হতে পারেন, প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রেও দারুণ হতে পারেন; কিন্তু তার ঘটতিগুলো স্পষ্ট হচ্ছে, তার দৃঢ় ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব নেই।’ মুহাম্মদ ইউনূস তার উপদেষ্টাদের দ্বারা ব্যাপক প্রভাবিত হতে পারেন বলে মনে করেন মোবাশ্বার হাসান।

অধ্যাপক ইউনূসের ঘনিষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে গণতন্ত্র সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে যাদের সাহায্য করার কথা ছিল, তাদের কেউ কেউ তাকে উপেক্ষা করছেন বলে মনে করছেন তিনি। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত, ২১ মে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এমন বক্তব্যের পর মনে হচ্ছে তিনি ধৈর্য হারিয়েছেন।

অধ্যাপক ইউনূস ২০২৬ সালের জুন নাগাদ দেশে নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন, তবে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেননি। তিনি তার উপদেষ্টাসভাকে বলেছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়ক বলে মনে করেন না।

গত নভেম্বরে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটি আর থামবে না। তবে এই যাত্রাপথে অনেক কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জোর দিয়ে বলে আসছে, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আগে একটি গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট প্রয়োজন। প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় সাবেক এই বিরোধী দল ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেতে চায়।

বিএনপি প্রথম দিকে ড. ইউনূসের সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। তবে গত কয়েক মাসে নীতিগত নানা বিষয়ে মতবিরোধের কারণে তারা সহযোগিতা বন্ধ রাখছে। এর মধ্যে রয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস ও তার কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম বন্দরকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে চান, যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের কিছু অঞ্চলে মানবিক সাহায্যের করিডর চালু করতে চান এবং দেশের প্রধান কর কর্তৃপক্ষকে (এনবিআর) ভাগ করতে চান।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ঠিক করা তারা জন্য চ্যালেঞ্জ প্রমাণিত হয়েছে এবং অনেকাংশে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের একটি নিষিদ্ধ আর অপরটি দ্রুত নির্বাচন চাইছে। এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস সময় নিতে চান বলে মনে হয়।

এতে সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল বিশ্লেষকেরাও বিরক্ত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোবাশ্বার হাসান বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে না পারার কারণ নেই। সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে এটি।

এদিকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা হাসিনার সমর্থকদের সঙ্গে সহিংস সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন; কিন্তু শেখ হাসিনার পুরোনো শত্রু বিএনপিকে সেই জায়গায় বসাতে ভয় পান। তবে বেশির ভাগ মানুষ এখনো অধ্যাপক ইউনূসের ওপর আস্থা রাখেন।

banner close
banner close