শুক্রবার

১৬ মে, ২০২৫
১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
১৮ জিলক্বদ, ১৪৪৬

মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মী নিয়োগে,বাংলাদেশকে সর্বাধিক গুরুত্ব মাল্টিপোল ভিসা দেয়ার আশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ মে, ২০২৫ ২০:৩৬

শেয়ার

মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মী নিয়োগে,বাংলাদেশকে সর্বাধিক গুরুত্ব মাল্টিপোল ভিসা দেয়ার আশ্বাস
ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রী। আগামী কয়েক মাসে দেশটি দেড় লাখ থেকে দুই লাখ অভিবাসী কর্মী নিয়োগ দেবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে অধিকসংখ্যক কর্মী নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার।

আজ বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়। বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের হয়রানি ও ভোগান্তি লাঘবে ছুটিতে দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে মাল্টিপল ভিসা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় দেশটি।

বৈঠকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার অনুরোধ জানান ড. আসিফ নজরুল। আজ মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব তথ্য জানান।

বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার আবারও উন্মুক্ত করতে কয়েকটি শর্ত যুক্ত করে মালয়েশিয়া। এর মধ্যে রয়েছে—জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও অর্থপাচারের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণ, অভিবাসন ব্যয় হ্রাস এবং সহযোগী এজেন্সি প্রথা (অ্যাসোসিয়েট ব্যারার) বাতিল করা।

আজকের বৈঠকে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল ও মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম চির সঙ্গে যৌথভাবে আলোচনা করেন ড. আসিফ নজরুল। তিনি বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর সুযোগ চেয়ে অনুরোধ জানান। মালয়েশিয়া সরকার বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেয়। বৈঠকে শ্রমিক প্রেরণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে এসব শর্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও পাকিস্তানের সঙ্গেও শ্রমিক নিয়োগ চুক্তি করেছে মালয়েশিয়া। সংশ্লিষ্টরা জানান, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অধিক অর্থ নেওয়ার সুযোগ থাকলে সেখানে বাণিজ্য হয়, আর অভিবাসন ব্যয় কম থাকলে প্রতারণার আশঙ্কা কমে যায়। সহযোগী এজেন্সি ব্যবস্থাও অভিবাসন ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।

জানা গেছে, মালয়েশিয়া বিভিন্ন খাতে অভিবাসী কর্মীর চাহিদা পূরণে খুব শিগগিরই ব্যাপক নিয়োগ শুরু করতে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য রয়েছে বড় সুযোগ। শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশটিতে সাধারণ শ্রমিকের বেতন মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি। কিছু জটিলতায় প্রায় এক বছর ধরে শ্রমবাজারটি স্থবির ছিল, যা এখন ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। এতে করে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কর্মী যাওয়ার নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। এর ফলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়বে।

কুয়ালালামপুর থেকে প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সী মিলিনিয়াম ট্রেড (এম) এসডিএন. বিএইচডি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ওয়াহিদুর রহমান আজকের বৈঠককে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নতুন আশার আলো হিসেবে উল্লেখ করে মালয়েশিয়া সরকার, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং প্রবাসী উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সোর্স কান্ট্রিগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশের কর্মীরাই এতদিন মাল্টিপল ভিসা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, ফলে ছুটিকালে দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এখন মাল্টিপল ভিসার প্রতিশ্রুতিতে শ্রমিকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়ায় পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রমিক পাঠাতে পারলে বছরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত রেমিট্যান্স আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে অভিবাসন ব্যয় কমানো ও শ্রমিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং দেশটিতে শ্রমবাজার পুনরায় চালুর বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামী ২১ মে ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

banner close
banner close