বৃহস্পতিবার

১৫ মে, ২০২৫
১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
১৭ জিলক্বদ, ১৪৪৬

বাংলাদেশ-জাপান বৈঠক : আলোচনার টেবিলে থাকবে ভারত-চীন প্রসঙ্গ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ মে, ২০২৫ ০৬:২৩

শেয়ার

বাংলাদেশ-জাপান বৈঠক : আলোচনার টেবিলে থাকবে ভারত-চীন প্রসঙ্গ
বাংলাদেশ-জাপান বৈঠক।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে জাপানের। অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি নিয়েও চিন্তিত দেশটি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দিল্লি-বেইজিং নিয়ে ঢাকার মনোভাব জানার চেষ্টা করে আসছে টোকিও।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশ ও জাপানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা, ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে বসছে। আলোচনার টেবিলে থাকার কথা রয়েছে ভারত-চীন প্রসঙ্গ। টোকিওর পক্ষ থেকে দিল্লি-বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে।

ঢাকা-বেইজিংয়ের নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এফওসির বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। বৈঠকের দ্বিতীয় ভাগে আঞ্চলিক ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়া এবং চীনসহ পূর্ব এশিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে জাপানের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে বাংলাদেশ তার মনোভাব তুলে ধরবে। এক্ষেত্রে আলোচনায় উঠে আসার কথা রয়েছে ভারত প্রসঙ্গ। অর্থাৎ ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক কেমন, সেটি টোকিওকে জানানো হবে। 

ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের বক্তব্য শোনার পর জাপান তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেয় তার জন্য অনুরোধ আসতে পারে জাপানের দিক থেকে। এ ছাড়া, জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। তাতে প্রকল্পটি সামনে এগিয়ে নেওয়া এবং ভারত যুক্ত হতে চাইলে তার জন্য সুযোগ রাখার বিষয়টি আসতে পারে।

জাপানের পক্ষ থেকে চীনসহ পূর্ব এশিয়া নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে। এক্ষেত্রে আলোচনার মূল ইস্যু হতে পারে চীন প্রসঙ্গ। বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, বিশেষ করে বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া নিয়ে যে ধারণা রয়েছে তার বাস্তব চিত্র জানতে চাইতে পারে টোকিও। এ ছাড়া, টোকিওর আলোচনায় আসতে পারে তিস্তা প্রকল্প, মাতারবাড়ি ও বে অফ বেঙ্গলে চীনকে কতটুকু অগ্রাধিকার দিচ্ছে ঢাকা।

সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে জাপানের কনসার্ন আছে। বাংলাদেশ চীনের দিকে বেশি ঝুঁকছে কিনা, আবার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বর্তমান অবস্থান জানতে চাইতে পারে জাপান। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, আমরা একজনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করব বিষয়টি এমন নয়। আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং স্বার্থ বিবেচনায় সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখব। চীন যেমন আমাদের জন্য গুরত্বপূর্ণ, তেমনি ভারতও। কাউকে আলাদা চোখে দেখার সুযোগ নাই। হয়তো অনেক সময় যে কারও সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয়, আবার খারাপ হয়। আবার দুই পক্ষের সম্মতি থাকলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানও করা যায়।

নাম গোপন রাখার অনুরোধ করে সাবেক এক রাষ্ট্রদূত বলেন, কূটনীতিতে মধ্যস্থতা বা একটি দেশের হয়ে দূতিয়ালি করার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। অনেক সময় দেখা যায় কোনো একটি দেশ তার বার্তা সরাসরি না দিয়ে অন্য কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক। অন্যদিকে জাপানের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। নানা বিবেচনায় বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের অস্বস্তি কিন্তু কাটেনি। সেক্ষেত্রে ভারতের হয়ে জাপান দূতিয়ালি করতেই পারে, যেহেতু তাদের ভালো সম্পর্ক। তবে প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এফওসি বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের পরিবর্তে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে, জাপানের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির সিনিয়র ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার আকাহোরি তাকেশি। প্রথম পর্বের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক, অর্থনৈতিক এবং সেক্টরাল সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা, মানুষে মানুষে যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ।

দ্বিতীয় পর্বে আঞ্চলিক ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়া এবং চীনসহ পূর্ব এশিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া, বৈশ্বিক প্রসঙ্গ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা।

সরকারের আরেক কর্মকর্তা জানান, আলোচনায় দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয় থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলতি মাসের শেষের দিকে জাপান সফর করবেন। এফওসি বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর নিয়ে আলোচনা হবে, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিইচি সাংবাদিকদের বলেন, আশা করছি ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপান সফর করবেন। এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়বে। জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক অংশীদার। উভয়পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।

প্রসঙ্গত, গত বছরের (২০২৪) জুনে ঢাকায় বাংলাদেশ জাপানের মধ্যে এফওসি হয়। এটি হবে ষষ্ঠ এফওসি।

 

banner close
banner close