বুধবার

১৪ মে, ২০২৫
৩১ বৈশাখ, ১৪৩২
১৭ জিলক্বদ, ১৪৪৬

শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ব গড়তে স্বপ্ন দেখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪ মে, ২০২৫ ২০:১৯

শেয়ার

শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ব গড়তে স্বপ্ন দেখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের নতুন এক বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এই আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত নতুন কিছু গড়ার সক্ষমতা রাখি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলে আমাদের মতো করে এক নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।’ তবে প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকা দরকার- কেমন পরিবেশ ও সমাজ তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই সম্পর্কে।

গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পটভূমি স্মরণ করে তিনি বলেন, বর্তমানে যে সভ্যতা চলছে—তা একটি ধ্বংসাত্মক অর্থনীতির সভ্যতা।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে অর্থনীতি তৈরি করেছি—তা মানুষের জন্য নয়, বরং ব্যবসার জন্য।’ ব্যবসাকেন্দ্রিক এই সভ্যতা আত্মঘাতী—তা টিকবে না বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।

ড. ইউনূস বলেন, দীর্ঘদিন পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আনন্দিত। তিনি স্মরণ করেন, ১৯৭২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন।

তিনি ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এবং কীভাবে গ্রামীণ ব্যাংক চট্টগ্রামে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের সহায়তা করতে গঠিত হয়েছিল—তা তুলে ধরেন। চবির অর্থনীতি বিভাগে গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।

অনুষ্ঠানে, চবি কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ইউনূসকে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডি লিট) উপাধিতে ভূষিত করে।

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার অধ্যাপক ইউনূসের হাতে ডি লিট সনদ তুলে দেন।

সমাবর্তনে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজসহ অন্যান্যরাও বক্তব্য দেন।

চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই সমাবর্তন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২২ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারীদের পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় ৪২ জন পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত এবং ৩৩ জন এমফিল গবেষককে সম্মানিত করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহিয়া আখতার সমাবর্তনকে ‘একটি একাডেমিক উদযাপন ও যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য একটি সর্বোচ্চ মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় এক দশক ধরে এই অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

সমার্বতন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ড. ইউনূস মঞ্চে আসলে তাকে স্নাতক ও শিক্ষকরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। চবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অনুষদ সদস্য ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের ক্যাম্পাসে আগমন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে তাকে স্বাগত জানানো হয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ইউনূস আজ সকালে তার নিজ জেলা চট্টগ্রাম সফর শুরু করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার প্রথম সফর। প্রায় ১২ ঘণ্টার এই সফরে টানা ব্যস্ততায় শেষ করবেন তিনি।

সমাবর্তনের পর অধ্যাপক ইউনূস হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে তার পৈতৃক বাড়ি পরিদর্শন করেন।

banner close
banner close