রবিবার

২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩ পৌষ, ১৪৩২

শেষ পর্যায়ে অমর একুশে বইমেলার কাজ: উদ্বোধনের বাকী আর মাত্র দুইদিন 

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:৪৫

আপডেট: ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৩:০৯

শেয়ার

শেষ পর্যায়ে অমর একুশে বইমেলার কাজ: উদ্বোধনের বাকী আর মাত্র দুইদিন 
শেষ পর্যায়ে অমর একুশে বইমেলার কাজ। বাংলা এডিশন

আর মাত্র দুইদিন পর ১ ফেব্রুয়ারী বিকেল চারটায় অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস এই বইমেলার উদ্বোধন করবেন। ইতিমধ্যে সবরকমের প্রস্তুতিসহ বইমেলা ময়দান ও আশেপাশের এলাকায় নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

প্রতিবারের মতো দুভাগে বিভক্ত মেলামাঠের একভাগ বাংলা একাডেমির নিজস্ব আঙ্গিনায় সাজানো হয়েছে উদ্বোধন মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন ও লিটলম্যাগ কর্ণার। আর বাহিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে ৬০০ এর বেশি প্রকাশনী সংস্থার বইয়ের স্টল। চার ইউনিট ও তিন ইউনিটের প্যাভিলিয়নগুলো প্রকাশকদের পছন্দ অনুযায়ী নিজস্ব খরচে সাজানো হলেও দুই ও এক ইউনিটের বইঘরগুলোতে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে অবয়ব তৈরি ও উপরে টিনের ছাদ তুলে দিয়েছে। টিনের ছাদের কারণে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবে বই ও দরকারি উপকরণ। তবে শুধু বই নয়, মেলার মাঠে খাবারের দোকান যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে পরিত্রাণ অর্থাৎ টয়লেট সুবিধা।

সরেজমিনে ২৮ জানুয়ারী বইমেলা দুপার ঘুরেই দেখা গেছে প্রকাশক বা স্টল মালিকদের সাথে নির্মাণ শ্রমিকদের ও স্টল উপকরণ বিক্রেতাদের চমৎকার কর্মব্যস্ত আড্ডা। টিএসসি ও বাংলা একাডেমির সামনে দুটো গেট দিয়েই প্রবেশ করা যাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলায়। মেট্রোরেল থেকে দুটি প্রবেশ পথের প্রথমেই চোখে পড়বে সারি সারি খাবারের দোকান। দুপাশে থরে থরে সাজানো হার্ডবোর্ড, কাঠ, বাঁশ, সুতো, লোহার পেরেক বা তারকাঁটা সহ ইলেকট্রনিক উপকরণ বিক্রেতাদের ভিড়। পাশাপাশি রয়েছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। ম্যাগনামওপাস, শিল্পৈষী ও জাগতিক প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আনোয়ার ফরিদ, আব্দুল সালাম এবং ফারুক হোসেন এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমদিকে মেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে একটা সংকট তৈরি হলেও এখন তা কেটে গেছে এবং বিগত বছরগুলোর তুলনায় আরো বেশি সুন্দর ও স্বচ্ছ হবে এবারের বইমেলা। তারা আরও জানান, এবারের বইমেলায় নতুনদের সংখ্যা বেড়েছে। আশাকরি ভালো ও মানসম্মত বই পাবেন পাঠক।

বাংলা একাডেমির ভিতরের অংশে প্রায় ২০০ স্টলের মধ্যে ৭৫টি লিটলম্যাগ। এখানে দেয়ালে ঝুলানো প্রকাশকদের ক্রমিক সহ স্টল নাম্বার দেয়া তালিকা দেখে দেখে যার যার স্টল খুঁজে নিয়ে কাজ শুরু করছেন তারা। পরিচয়পত্র সংগ্রহের জন্য দুটোভাগ। বিক্রয় প্রতিনিধিদের জন্য প্রশাসনিক ভবন এবং স্টল মালিকদের জন্য বাংলা একাডেমির পুস্তক বিক্রয় ভবনে এই ব্যবস্থা। সবমিলিয়ে মেলার আয়োজন নিয়ে খুশি প্রকাশকদের বড় একটি অংশ।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার শুরু করেন। এই ৩২টি বই ছিলো চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমানে মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা বই।

১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমী মহান একুশে মেলা উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে একাডেমী প্রকাশিত বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি মুক্তধারা, স্টান্ডার্ড পাবলিশার্স এবং এদের দেখাদেখি আরও কেউ কেউ বাংলা একাডেমীর মাঠে নিজেদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করে।

১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমী ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমী তার নিজস্ব প্রকাশিত বই প্রদর্শন ও ম্যুরাল প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রফেসর আবু মহাম্মেদ হবীবুল্লাহ।

ঐ গণজমায়েতকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একাডেমীর পূর্বদিকের দেয়াল বরাবর নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় যে যার মতো কিছু স্টল নির্মাণ করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এতে বাংলা একাডেমীর কোনো ভূমিকা ছিলো না শুধু মাঠের জায়গাটুকু দেওয়া ছাড়া।

১৯৭৫ সালে একাডেমী মাঠের কিছু জায়গা চুনের দাগ দিয়ে প্রকাশকদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। প্রকাশকরা যে যার মতো স্টল তৈরি করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এ অবস্থা চলতে থাকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত। এ সময় পর্যন্ত এই আয়োজনের কোনো স্বীকৃতি ছিলো না। কোনো নামও দেওয়া হয়নি। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনেও এর কোনো উল্লেখ থাকতো না।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর অনুষ্ঠানসূচিতেও এই কার্যক্রমের কোনো উল্লেখ করা হয়নি।

১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন।

১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ঐ সময় অমর একুশে উপলক্ষে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠিত হতো। মেলার তখন নাম ছিলো একুশে গ্রন্থমেলা।

১৯৮১ সালের একুশে বইমেলার মেয়াদ কমিয়ে ২১ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করা হয়। কিন্তু প্রকাশকদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালে মেলার মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করে করা হয় ২১ দিন। মেলার উদ্যোক্তা বাংলা একাডেমী। সহযোগিতায় ছিলো জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।

১৯৮৩ সালে মেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে বাদ দেওয়া হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে এই মেলা মেলার নতুন নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।

প্রকাশকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাড়ানো হয় মেলার পরিসর। আগে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হতো। এরপর ক্রেতা, দর্শক ও বিক্রেতাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৪ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই মেলা নিয়মিতভাবে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১৪ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পরিসর বৃদ্ধি করা হয়। এরপর থেকে ছয়শত প্রকাশনী সংস্থা নিয়ে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার আয়োজন হয়ে আসছে।

তবে চলতি বছর বিগত দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পুরানো ছক ভেঙে নতুন আঙ্গিকে বইমেলা হবে বলে জানালেন বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলেন, এবার জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে গড়ে উঠবে লেখক পাঠক আর প্রকাশকের মেলবন্ধন। স্টল পরিধি আর প্যাভিলিয়ন নিয়ে প্রকাশকদের মাঝে অসন্তুষ্টি থাকলেও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য- সচিব সরকার আমিন বলেন, অভ্যুত্থানের চেতনা মাথায় রেখে সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেলা কমিটি।



banner close
banner close