মঙ্গলবার

১৭ জুন, ২০২৫
৩ আষাঢ়, ১৪৩২
২১ , ১৪৪৬

‘শেখ মুজিব ইজ ডেড’: সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের লাইভে ১৫ আগস্টের যে বিবরণ দিলেন কর্নেল রাশেদ চৌধুরী

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৪:২৫

আপডেট: ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১৪:২৮

শেয়ার

‘শেখ মুজিব ইজ ডেড’: সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের লাইভে ১৫ আগস্টের যে বিবরণ দিলেন কর্নেল রাশেদ চৌধুরী
ছবি: বাংলা এডিশন

১৫ আগস্টের সকাল থেকে রেডিওতে ঘোষণা হচ্ছিল, ‘শেখ মুজিব ইজ ডেড।’ সেসময় শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় এ ঘটনা। এবার ১৫ আগস্টের ঘটনা ও এর পেছনের ঘটনার বর্ণনা নিজ মুখে দিলেন মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এম রাশেদ চৌধুরী (বীর প্রতীক)।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে ‘আপনারা দেখছেন বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, অতিথি: বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ চৌধুরী (বীর প্রতীক)’ শিরোনামে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের লাইভে যুক্ত হয়ে সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা বাংলাদেশের এ যাবতকালে সবচেয়ে বেশি আলোচিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন। সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত লাইভ আলোচনা অনুষ্ঠানটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। এই আলোচনায় রাশেদ চৌধুরী জানান কীভাবে তিনি শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই পাকিস্তান সেনাবাহিণীতে চাকরিরত থেকেও রাশেদ চৌধুরী কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলেন- সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান থাকা অবস্থায় দেশে কি হচ্ছে জানতাম না। শুরুতে পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেও মে মাসে বিদেশ থেকে গোপনে পাঠানো কিছু পেপার (সংবাদপত্র) ক্লিপিং পেলাম। বিখ্যাত ইন্টারন্যাশনালের পেপার ক্লিপিং ছিল।

‘ওই খবরগুলো দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমি কয়েকদিন ঘুমাতে পারিনি। তখন আমার মধ্যে বিরাট পরিবর্তন এলো। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি এই দেশে থাকতে পারি না। আমাকে যেতে হবে। তারপর কয়েকটা অ্যাটেম্প (চেষ্টা) নিয়েছি। মনে হচ্ছিল আমি একটা প্লেন নিয়ে যদি চলে যেতে পারি। শিয়ালকোট দিয়েও যাওয়ার চিন্তা করি। নানাভাবে চেষ্টার পর একদিন জিপ চালিয়ে বর্ডার ক্রস করে ভারতে চলে আসতে সক্ষম হই।’

বীর উত্তম জিয়াউর রহমানকে যুদ্ধের সময় দেখেছেন কিনা- সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে আমি যুদ্ধের সময় দেখেছি। আমি জিয়াউর রহমানের ফোর্সে ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি বলে যে উনি (জিয়াউর রহমান) যুদ্ধ করেননি, উনি পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন…, পাগল ছাড়া এগুলো কেউ বিশ্বাস করবে না।’

জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ মুক্তিযুদ্ধে দলটির ভূমিকা কেমন ছিল- এমন প্রশ্ন করলে রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘সে সময় পলিটিক্যাল কোনো ইলিমেন্টের সাথে আমার আলাপ হয়নি। যুদ্ধের সময় আমি এদের দেখতে পাইনি। পরবর্তী সময় আমি নানা কাহিনী শুনেছি। আমি ছিলাম সম্মুখ যুদ্ধে, পেছনে কী হয়েছে জানি না। যুদ্ধের শেষ দিকে জয়েন করার জন্য আমি যুদ্ধ নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম।’

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন রাশেদ চৌধুরীর কাছে জানতে চান- ১৫ আগস্ট কেন ঘটালেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যারা যুদ্ধ করেছে তাদের দেশ নিয়ে আশা আকাঙ্ক্ষা অনেক। একজন ইয়াং অফিসার হিসেবে আমার মনের মধ্যেও ও রকম ছিল। কিন্তু যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ের অবস্থা-পরিস্থিতি দেখে আমরা অনেক হতাশ হয়ে যাই। পলিটিক্যাল গর্ভমেন্ট (সে সময়কার আওয়ামী সরকার) যেভাবে চালাচ্ছে মনে হয় দেশের মধ্যে লুটতরাজ…. অন্যরকম পরিস্থিতি হয়ে গেছে।

রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫ এ পরিস্থিতি কী হয়েছিল সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ম্যান মেইড (মানবসৃষ্ট) দুর্ভিক্ষ থেকে কী পরিস্থিতি হয়েছিল আমরাও সেটা দেখেছি। এই পরিস্থিতিতে কিছু একটা করা যায় কি না এই নিয়ে আমরা ইয়াং অফিসাররা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করতাম। হয়তো সিনিয়রদের মধ্যেও আলাপ হতো, কিন্তু কেউ এটা শেয়ার করতো না। এগুলো গোপনে আলোচনা করা হতো।’

তিনি বলেন, ‘সেভেন্টি ফাইভে যেটা ঘটে (মুজিব হত্যা), সেটা আগে থেকেই কল্পনা ছিল; কিন্তু বাকশাল হওয়ার পরে আরও একটু চিন্তাভাবনা শুরু হলো। আমি কিন্তু মূল পরিকল্পনার সঙ্গে খুব একটা জড়িত ছিলাম না। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করতাম, বাইরে। তখন আমার চাকরিও নাই। আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। ব্যবসা করার জন্য কোনো অর্ডার পেতে আমার আগের ইউনিটিতে ক্যান্টনমেন্টে যেতাম মাঝেমাঝে।’

এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘১৫ আগস্টের পুরো অপারেশনের দায়িত্বে ছিল ফারুক। আর রশিদের দায়িত্ব ছিল পলিটক্যাল এলিমেন্টদের সংগত করা, নিয়ে আসা। ফারুক কয়েকটা টার্গেট সিলেক্ট করলো। যেমন শেখ মুজিবের বাসা, সেরনিয়াবাদের বাসা, রেডিও স্টেশন, শেখ মনির বাসা। ফারুক শেখ মুজিবের বাসায় দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল মেজর ডালিমকে। কিন্তু সে অপারগতা প্রকাশ করলো। পরে মেজর বজলুল হুদাকে দায়িত্ব দিলে সে রাজি হলো। হুদার সঙ্গে আরও দুয়েকজন অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। ডালিমকে সেরনিয়াবাদের বাসার আশেপাশে এবং রেডিও স্টেশনের দায়িত্ব দেওয়া হলো। আমার দায়িত্ব ছিল রেডিও স্টেশনে ডালিমের আন্ডারে। প্রত্যেককে আলাদা টার্গেট বলা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমি ভোরের দিকে রেডিও স্টেশন টেকেন ওভার (দখল) করলাম। আমার দায়িত্ব ছিল, ওইটাতে ভাষণ দেওয়ার জন্য রেডি করা। সাড়ে ৬টার দিকে ডালিম আসলো। আমাকে খুঁজলো, এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো উই হ্যাভ ডান ইট। সে সময় ডালিমের স্টেটমেন্ট রেকর্ড করে প্রচার করা হয় এবং এটাই বারবার চলতে থাকে।’

১৫ আগস্টের অপারেশনে যাওয়ার আগে বিস্তারিত কিছু তাকে বলা হয়নি জানিয়ে রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘মুজিবের ভাগ্য কী হবে তা আমরা জানি না। মুজিবকে তার বাসায় মারার কোনো প্ল্যান ছিল না। প্ল্যান ছিল মুজিবকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সামরিক কোর্ট মার্শাল করা, বাসায় নয়। রশিদ, ফারুক অরিজিনাল প্ল্যানার। এটা সত্য হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না মুজিবকে ওখানে (তার বাসায়) মারার কোনো প্ল্যান ছিল। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রশিদ খন্দকার মোশতাককে নিয়ে রেডিও স্টেশনে আসলো। আমরা গার্ড অব অনার দিলাম, আফটার অল হি ইজ নিউ প্রেসিডেন্ট। তারপর থেকে রেডিও স্টেশনটাই বাংলাদেশের নতুন সরকারের হেডকোয়ার্টার।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন মুজিবের বাসভবনে কী হলো? আমি সেখানে ছিলাম না। পরবর্তীতে জেনেছি। আমার বইয়ে মেজর বজলুল হুদার স্টেটমেন্ট আছে। সে বলেছে, সে সৈন্য সামন্ত নিয়ে তখনো ভোর হবে হবে মুজিবের বাসভনে পৌঁছায়। হুদা সুবেদারকে গিয়ে বললো, আর্মি হ্যাজ টেকেন ওভার। মুজিব ইজ নো মোর ইন পাওয়ার। মুজিবকে অ্যারেস্ট করতে আসছি। আপনারা আমাদের সাথে আছেন কি না। এক বাক্যে সবাই বললো, স্যার আমরা আপনাদের সাথে আছি। নিচে শব্দ শুনে দোতলা থেকে শেখ কামাল স্টেনগান দিয়ে গোলা ছুঁড়তে ছুঁড়তে উপর থেকে নিচে আসছে। শেখ কামালের ওয়াইফ সুলতানা একটা অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে নিচে গুলি করতে লাগলো।’

রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘তারা (শেখ কামাল দম্পতি) বুঝতে পেরেছিল তাদের কেউ অ্যাটাক করতে আসছে। এই গোলাগুলিতে একজন সিপাহী মারা গেছে, কয়েকজন আহত হয়। এটা দেখে অন্যান্য সিপাহীরা ক্ষেপে গেছে। বজলুল হুদার কথা মতো, শেখ কামাল আর সুলতানা প্রথমে গোলাগুলি শুরু করে। শেখ কামাল নিচে আসছিল সিঁড়ি দিয়ে গুলি করতে করতে চিৎকার করতে করতে। দোতলা থেকে গুলি এসে সিপাহী মারা গেলে একজন নাকি বলে উঠল শালার গোষ্ঠীসুদ্ধু মেরে দে। শেখ মুজিবের বাসার এক চাকর যে পালিয়ে গিয়েছিল, সেও স্বীকার করেছে গোলাগুলি শেখ কামাল আর সুলতানা শুরু করেছে প্রথমে। এরপর সিপাহীরা গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। এরমধ্যে হুদাও আসছে। পরে হুদা লোকজন নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। বাই দ্যাট টাইম শেখ কামাল ওয়াজ ডেড, শেখ নাসেরও ছিল।

মেজর বজলুল হুদার বক্তব্যের বরাত দিয়ে রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘সে কয়েকজনকে নিয়ে উপরে গেছে শেখ মুজিবকে নামানোর জন্য। মেজর মহিউদ্দীনও ছিল। এরমধ্যে শেখ মুজিবও ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। তারা শেখ মুজিবকে নিয়ে নিচে আসার সময়, উপর থেকে আবার গুলি ছোড়া শুরু করে সুলতানা ও শেখ জামাল। এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে তারা। এক গুলিতে মুজিবের পেছনে ছিল এক সিপাহী, সে পড়ে গেছে। মুজিব দাঁড়িয়ে ছিল, হুদা আর মহিউদ্দীন তখন ডাক করে বেঁচে যায়। এদিকে, গুলাগুলির শব্দ শুনে অন্যান্য লাঞ্চারের লোকজনও চলে আসে। তারাও পাল্টা গুলি ছোড়ে। তখন নিচে থেকে গুলি মুজিবের গায়ে লাগলে তিনি পড়ে যান, রক্ত গড়িয়ে পড়ে।’

শেখ রাসেলকে কেন হত্যা করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই দোতলার একটা রুমে বন্ধ ছিল। শেখ মুজিব যখন পড়ে গেল তখনই আরেক রাউন্ড গোলাগুলি শুরু হলো উপর থেকে নিচের দিকে জানালা দিয়ে। এই পর্যায়ে কয়েকজন সিপাহী ক্রল ওই রুমের জানালা দিয়ে ভেতরে গ্রেনেড ড্রপ করে সরে পড়ে। ওই গ্রেনেড বাস্ট করে বাকি সবাই একসঙ্গে মারা যায়। রাসেল নিচে আসেনি। শুধু শেখ কামাল নিচে মারা যায়। মুজিবের মৃত্যুর পর ফরেনসিক করলে হয়তো দেখা যেত তারা কীভাবে মারা গেছে, গুলিতে না গ্রেনেড বিস্ফোরণে।’

রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘ততক্ষণে রেডিওতে ঘোষণা হচ্ছে, শেখ মুজিব ইজ ডেড।’

বাংলাদেশের পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানারও সেদিন নাই হয়ে যাওয়া উচিত ছিল, এমন মনে হয়েছিল কি না-ইলিয়াস হোসাইনের এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘সেদিনের ঘটনায় ৩২ নম্বরে কীভাবে লোকজন মারা গেছে সেটা আমি বলেছি। সবাই বলে মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে এবং শেখ হাসিনা যে বিচার করেছে, হত্যার বিচারই করেছে। কিন্তু আমি বলি, না মুজিবকে কেউ হত্যা করেনি। মুজিবের মৃত্যু মুজিব নিজেই ডেকে এনেছে। মুজিবের ৪৪ মাসের রাজত্বকালে দেশে যে কী অনাচার, অবিচার হয়েছে সে জন্যই মুজিবের এই পরিণতি হয়েছে এবং মুজিবকে তা যেতে হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেজর রশিদের বক্তব্যে বোঝা গেছে যে মুজিবকে তার বাসা থেকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে এসে পরে একটা সামরিক কোর্ট মার্শাল করে এর মাধ্যমে তাকে এক্সিকিউশন করার প্ল্যান ছিল। তবে এটা সত্য মুজিবকে জীবিত রেখে কোনো পরিবর্তন আনা যেত না। মুজিব যে পরিমাণ শক্তিশালী ছিল, তার আন্ডারে যে রকম বাহিনী কাজ করছিল, মুজিবকে জীবিত রেখে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব ছিল না। সিভিলের লোকজন অনেকেই আমাদের কাছে এটা বলেছে যে, মুজিবকে যেতে হতো।’

এ সময় রাশেদ চৌধুরী শেখ মুজিবের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘যেভাবে মুজিব মারা পড়ছে, দুঃখিত। মুজিবের যাওয়াটা কেউ কল্পনা করেনি বা মুজিবের বাসায় এবং অন্যান্য টার্গেটে যেসব লোকজন মারা গেছে, যাদের পলিটিক্সের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র ছিল না সেজন্য আমরা দুঃখিত। কিন্তু এমন একটা ক্যুতে, যাতে যুগ পরিবর্তনেরই একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে সেখানে কিছু লোক মারা পড়াটা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু নয়। দুনিয়া সব ক্যুর ইতিহাস দেখলে বোঝা যাবে ২২ জন লোকের মৃত্যু বিরাট কিছু না। তবে আমার মতে এটা দুঃখজনক।’

বাহাত্তরের পর থেকে শেখ মুজিবের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সময় কেমন ছিল জানতে চাইলে রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ মুজিব যখন বাংলাদেশে আসে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে, তখন ঢাকা এয়ারপোর্ট এবং পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লোকজনের যে ভালোবাসা পেয়েছে, দুনিয়ার কোনো নেতা এ রকম পেয়েছে বলে আমার মনে নাই। এটা সত্য যে একাত্তরের আগে শেখ মুজিবের অবদান ছিল। এটা অস্বীকার করা যায় না। বহু অবদান ছিল, লোকজনকে জাগ্রত করা, পাকিস্তানের অ্যাগেইনেস্ট করা, কিন্তু দুঃখজনক হলো যে মুজিব সারা জীবন যুদ্ধ করেছে, সংগ্রাম করেছে গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য আর তিনি ক্ষতায় বসেই কিছু দিনের মধ্যে সব পাল্টে গেল।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় গিয়ে মুজিব বনে গেলেন বিরাট একজন অত্যাচারী, স্বৈরাচার। এটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। একাত্তরের আগের মুজিব এক রকম, একাত্তরের পরের মুজিব আরেক রকম। সেভেন্টি ওয়ানেও মুজিবের কার্যকলাপে সন্দেহ ছিল। মুজিব কোনোদিন স্বাধীনতার ডাক দেয়নি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা উনি চাননি। উনি চাচ্ছিলেন পাকিস্তান একত্রে থাকুক এবং উনি প্রধানমন্ত্রী হবেন।’

প্রসঙ্গত, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

banner close
banner close