ভারতীয় একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশ নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে স্বল্প পরিসরের ব্যালিস্টিক মিসাইল (এসআরবিএম) সংগ্রহের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে জানা গেছে।
ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্স উইং-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ৪০০ কিলোমিটারেরও কম দূরুত্বে আঘাত হানতে সক্ষম ‘আবদালি’ এসআরবিএমকে সংগ্রহের জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করছে- যা স্পষ্টতই ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক বা আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আবদালি এসআরবিএম, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ‘হাতফ-২’ নামে পরিচিত একটি কৌশলগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য নকশা করা হয়েছে। এর পরিসর সীমিত হলেও এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শহরে আক্রমণের জন্য যথেষ্ট। যার ফলে এ ক্ষেপণাস্ত্রটি আঞ্চলিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হয়েছে ওঠতে পারে।
পাকিস্তানের মহাকাশ গবেষণা কমিশন (সুপারকো) দ্বারা তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রটির আকস্মিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে, যা নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইতোমধ্যে কাজ করেছে।
বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ঢাকার এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত নিরাপত্তা ভারসাম্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করতে পারে বলে শঙ্কা করছে ভারত।
যদিও আবদালি এসআরবিএম-এর আঘাত হানার পরিসীমা এতটাও বড় নয়, তবে এটি বাংলাদেশ সীমান্তে মোতায়েন আক্রমণাত্মক অস্ত্রের পরিবর্তে ঢাকার জন্য একটি শক্তিশালী মনস্তাত্ত্বিক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।
ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সামরিক অবকাঠামোর সম্প্রসারণ রয়েছে। দিল্লির সামরিক সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে ঢাকার এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুটি কারণে পাকিস্তান বাংলাদেশের এ অনুরোধে রাজি হতে পারে। প্রথমত, পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে প্রতিবেশীকে সমর্থন করে এই অঞ্চলে ইসলামাবাদের প্রভাব বিস্তার করা এবং দ্বিতীয়ত আবদালি ক্ষেপণাস্ত্রের সীমিত পরিসরের কারণে এর বিক্রয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে উল্লেখযোগ্যভাবে কোনো চাপ তৈরি করবে না।
এ ছাড়া পাকিস্তান বা বাংলাদেশ কেউই মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর)সহ আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সদস্য নয়।
বাংলাদেশের অস্ত্রাগারে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আসা এই অঞ্চলকে একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতার দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে দিল্লি। বাংলাদেশকে পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করলে, সীমান্তে ভারত আরও আক্রমণাত্মক ক্ষমতা স্থাপন করে এর প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
তাছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্তারের বিষয়ে সতর্ক থাকা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা বা কূটনৈতিক চাপ দিয়ে এর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে- যা বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয়ের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুন:








