বৃহস্পতিবার

৮ মে, ২০২৫
২৫ বৈশাখ, ১৪৩২
১০ জিলক্বদ, ১৪৪৬

নারায়ণগঞ্জ ও কালিয়াকৈরে পুলিশ ফাঁড়ির পাশে ছুরিকাঘাতে দুই শিক্ষার্থী নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৩:৩০

শেয়ার

নারায়ণগঞ্জ ও কালিয়াকৈরে পুলিশ ফাঁড়ির পাশে ছুরিকাঘাতে দুই শিক্ষার্থী নিহত
নিহত দুই শিক্ষার্থী। ছবি : সংগৃহীত

জুলাই আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া দুই শিক্ষার্থী দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়েছে। নিহত দুই শিক্ষার্থীরা হলেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের তাজবির হোসেন শিহান ও মো. ওয়াজেদ সীমান্ত তিনি রাজধানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

সীমান্তের বাবা আলম চান বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে দেওভোগের বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে শহরের ডিআইটি এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তাঁর ছেলে আহত হন। পথচারীরা তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে ছেলের অস্ত্রোপচারের পর সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ১০টার দিকে সীমান্তের মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ওই তরুণের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার কথা ছিল। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা করতে আসেননি। ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরার চেষ্টা চলছে।

শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। সংগঠনটির সভাপতি ফারহানা মুনা ও সাধারণ সম্পাদক সৃজয় সাহা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাত বছর আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে তরুণ সাংবাদিক শাহরিয়াজ শুভ্র ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন। সেই ঘটনার আজ পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি। উল্টো শ্রমিক–অধ্যুষিত এই শহরের প্রতিটি পাড়া–মহল্লা ছিনতাইকারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া এলাকায় দিনদুপুরে মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। সীমান্তের মৃত্যু এরই ধারাবাহিকতা।

অপর দিকে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসংলগ্ন মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পশ্চিম পাশে হানিফ স্পিনিং মিলের সামনে তাজবির হোসেন ওরফে শিহানকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত শিহান মৌচাক জামতলা এলাকার বাসিন্দা এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী ও রাজধানীর উত্তরায় একটি কলসেন্টারে চাকরি করতেন।

পুলিশ ও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, উত্তরায় কাজে যাওয়ার জন্য ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মৌচাক বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন তাজবির। পথে পাঁচ-ছয়জন যুবক তাঁকে ধাওয়া দিয়ে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির কাছে হানিফ স্পিনিং কারখানার সামনে নিয়ে যান। একপর্যায়ে তাঁকে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যান। খবর পেয়ে সকাল ৭টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাজবিরকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও হানিফ স্পিনিং কারখানা নিরাপত্তাকর্মী আবদুর রাজ্জাক বলেন, পাঁচজন যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে মৌচাক মাজার রোডের মাথা থেকে তাজবিরকে ধাওয়া দিয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পশ্চিম দিকে হানিফ স্পিনিংয়ের গেটের সামনে পর্যন্ত নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে ধরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান তাঁরা।

শিহান হত্যার ঘটনায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গেলো দুদিন ধরে জড়িতদের গ্রেফতার ও সহপাঠী হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে পূর্বশত্রুতার জেরে তাজবিরকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া তারা ছিনতাইকারী কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিহত শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা বলছেন নিহতরা বিভিন্ন ইসুতে ভারত বিরোধী প্রতিবাদে সরব ছিলেন। তারই কারণে এ হত্যা কান্ড হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 


 

 

banner close
banner close