রবিবার

২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩ পৌষ, ১৪৩২

আরব আমিরাতে বন্দী ২৫ বাংলাদেশির মুক্তির দাবি এনসিপি ডায়াস্পোরার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট, ২০২৫ ১৭:৪৫

আপডেট: ১৫ আগস্ট, ২০২৫ ১৭:৪৮

শেয়ার

আরব আমিরাতে বন্দী ২৫ বাংলাদেশির মুক্তির দাবি এনসিপি ডায়াস্পোরার
ছবি সংগৃহীত

গত দুই মাস ধরে জাতীয় নাগরিক পার্টি - এনসিপির প্রবাসী সংগঠন, এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ফেরত আসা ১৮৮ জন প্রবাসী শ্রমিক এবং বর্তমানে সেখানে আটক ২৫ জন বাংলাদেশি নাগরিকের পরিবারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছে। এই সময়ে তাঁদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাঁদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যার বিস্তারিত শোনা হয়েছে, এবং আইনি ও কূটনৈতিক সহায়তার জন্য কার্যকর কৌশল ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণআন্দোলনে সংহতি জানিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কারণে শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক দুবাইতে আটক হন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার পদক্ষেপে ১৮৮ জন ছাড়া পেলে, ২৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক প্রায় এক বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন বন্দিশালায় আটক রয়েছেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে বাংলাদেশে চরম অর্থনৈতিক সংকট, মানসিক চাপ এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনযাপন করছেন।

৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ঢাকায় আটক ২৫ জনের পরিবারের উপস্থিতিতে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পরিবারের সদস্যরা সরাসরি তাঁদের দুর্দশা ও দাবি তুলে ধরেন। এর পূর্বে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে প্রবাসী শ্রমিকদের মুক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের অপরিহার্যতা জোর দিয়ে তুলে ধরা হয়।

পরবর্তী সময়ে, এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েনন্সের গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটর (অপারেশনস) তারিক আদনান মুন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত উপদেষ্টা লুতফি সিদ্দিকী এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে বৈঠকের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ইউএই-ভিত্তিক কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়।

এই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় গত ১১ ও ১২ আগস্ট এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটর (অপারেশন) তারিক আদনান মুনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যথাক্রমে দুবাই কনস্যুল জেনারেল রাশেদুজ্জামান এবং আবুধাবিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধির সহায়তায় স্থানীয় দুবাই ও আবুধাবি প্রতিনিধিগণ বৈঠক দুটিতে অংশ নেন।

প্রধান তিন দফা দাবি:

১. অবিলম্বে সব অভিযোগ প্রত্যাহার এবং একটি কার্যকর কনস্যুলার কমিউনিকেশন চ্যানেল স্থাপন।

২. দ্রুত সময়ের মধ্যে কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ নিয়ে আটক ২৫ জনকে মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনা, ভবিষ্যৎ হয়রানি থেকে মুক্তি নিশ্চিত করা।

৩. যেসব কর্মকর্তার নামে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে দুবাই পুলিশের কাছে অভিযোগ দাখিলের অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ।

১১ আগস্ট দুবাই কনসুল জেনারেল রাশেদুজ্জামানের সাথে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে প্রবাসীদের নানান সমস্যা এবং বিশেষভাবে আটক ২৫ জন নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি জানান, বর্তমানে কূটনৈতিক আলাপ চলছে। আমাদের দাবি তিনি শুনেছেন এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন, তবে দুবাই সরকারের আনুষ্ঠানিক তথ্য ছাড়া পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন বলে উল্লেখ করেন।

১২ আগস্ট আবুধাবিতে রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদের সাথে বৈঠকে তিনিও একই পরিস্থিতি তুলে ধরেন। আমরা তাঁকে কনস্যুলার কমিউনিকেশন চ্যানেল স্থাপনের অনুরোধ জানাই। তিনি জানান, ইউএই সরকারের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া সম্ভব নয়, তবে সম্প্রতি তাঁদের পক্ষ থেকে আটক তালিকা পাঠানো হয়েছে এবং দুবাই জেলে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তাদের বিশেষ অনুরোধ:

ইউএই সরকারের কাছ থেকে দ্রুত চার্জশিট সংগ্রহ করে কনস্যুলার কমিউনিকেশন চ্যানেল স্থাপন।

শুধুমাত্র জুলাই আন্দোলনের কারণে অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সহায়তায় ইতোমধ্যে ১৮৮ জন মুক্তির নজির ব্যবহার করে অবশিষ্ট সবাইকে মুক্ত করা এবং সব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে ইউএই সরকারের সাথে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া।

যখন অন্য কোনো পক্ষ এই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি, তখন এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স প্রথম দিন থেকেই প্রবাসী শ্রমিকদের পাশে থেকে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আমরা শুধুমাত্র দাবি উত্থাপন করিনি, বরং পরিবারগুলোর সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছি, বাংলাদেশ ও প্রবাসে ধারাবাহিক বৈঠক পরিচালনা করেছি এবং কূটনৈতিক ও আইনি সমাধানের জন্য সুসংগঠিত পদক্ষেপ নিয়েছি।

আমরা প্রত্যাশা করি, কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রাষ্ট্রদূত ও কনসুল জেনারেল এই দুইটি অপেক্ষাকৃত সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অনুরোধ ইউএই সরকার ও পুলিশের কাছে পৌঁছে দেবেন—যাতে কনস্যুলার চ্যানেল স্থাপন, ১৮৮ জন মুক্তির রেফারেন্সে আটক মুক্তি, এবং হাজারো প্রবাসীর নামে আরোপিত অভিযোগ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া এগিয়ে যায়।



banner close
banner close