শনিবার

২৪ মে, ২০২৫
৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
২৬ জিলক্বদ, ১৪৪৬

বর্ষার আগেই বাড়ছে ডায়রিয়া ও জ্বর: কোন অভ্যাসগুলো বিপজ্জনক, কী থেকে বিরত থাকবেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২ মে, ২০২৫ ০৭:০২

শেয়ার

বর্ষার আগেই বাড়ছে ডায়রিয়া ও জ্বর: কোন অভ্যাসগুলো বিপজ্জনক, কী থেকে বিরত থাকবেন?
ছবি: সংগৃহীত

বর্ষা মৌসুম এখনো পুরোপুরি শুরু না হলেও প্রকৃতির আচরণে এর ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। হঠাৎ বৃষ্টি, গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া এখন একসঙ্গে দেখা দিচ্ছে। আর এই আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের প্রকোপ—বিশেষ করে ডায়রিয়া, ভাইরাল জ্বর, সর্দি-কাশি। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের জরুরি বিভাগে প্রতিদিনই এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এই সময়টাতে শুধু ওষুধ নির্ভরতা যথেষ্ট নয়, দরকার সঠিক সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক অভ্যাস। বিশেষ করে কিছু ভুল কাজ আছে যেগুলো এ সময় শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। বর্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ ধরনের অভ্যাস থেকে বিরত থাকা জরুরি।

প্রথমত, খোলা পানীয় ও রাস্তার খাবার খাওয়া এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে খাদ্যে দ্রুত জীবাণু জন্ম নিতে পারে। রাস্তার শরবত, ফুচকা বা অন্যান্য খাবার যতই লোভনীয় হোক না কেন, খোলা জায়গায় সংরক্ষিত থাকায় এগুলোতে সহজেই ডায়রিয়া, টাইফয়েড বা হেপাটাইটিসের জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। এই কারণে চিকিৎসকরা বরাবরই বাড়িতে প্রস্তুত নিরাপদ ও বিশুদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

দ্বিতীয়ত, বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার পর ভেজা কাপড়ে দীর্ঘক্ষণ থাকা থেকেও অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। অনেকেই বৃষ্টি থেকে এসে শুকনো কাপড় না বদলে ঘরে বসে থাকেন, যা ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি এবং ভাইরাল জ্বরের অন্যতম কারণ। শিশুরা এ দিক থেকে বেশি সংবেদনশীল। তাই ভিজে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পোশাক পরিবর্তন এবং শরীর শুকিয়ে নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তৃতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি চিকিৎসকরা বলছেন, তা হলো স্বেচ্ছায় ওষুধ সেবনের প্রবণতা থেকে বিরত থাকা। অনেকেই সামান্য জ্বর, মাথাব্যথা বা শরীর গরম লাগলে সঙ্গে সঙ্গে প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেন। এই অভ্যাস শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণে আরও মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যদি তা সঠিক ডোজে এবং উপযুক্ত সময় না খেয়ে থাকেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ না নেওয়াই এই সময়ের সবচেয়ে জরুরি সতর্কতা।

অপরিষ্কার পরিবেশও বর্ষা-পূর্ব এই সময়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে মশা বংশবিস্তার করে, যা ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের বিস্তার ঘটায়। ফলে নিজের ঘর এবং আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব এখন সবাইকেই নিতে হবে।

এ সময় পানি খাওয়ার বিষয়টিও অবহেলা করা যাবে না। অনেকেই বর্ষাকালে গরমের তুলনায় কম তৃষ্ণা অনুভব করেন, ফলে পানি খাওয়ার পরিমাণও কমে যায়। কিন্তু গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় শরীর থেকে ঘাম হয়ে পানি বেরিয়ে যায় এবং সহজেই পানিশূন্যতা তৈরি হয়। চিকিৎসকদের মতে, প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।

ডায়রিয়ার বিস্তার সম্পর্কেও সচেতনতা জরুরি। এটি প্রধানত পানিবাহিত একটি রোগ হলেও পচা-বাসি খাবার থেকেও ছড়ায়। জীবাণু পচা খাবারে পড়ে দ্রুত গুণিতগত হারে বংশবিস্তার করে এবং তা মানবদেহে প্রবেশ করলে গুরুতর পেটের সমস্যা তৈরি করে। জীবাণুবাহিত পানি দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়া থেকেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়া সম্ভব। তবে গরম খাবারে জীবাণু থাকলেও সেগুলো ততটা সক্রিয় থাকে না।

ডায়রিয়ার লক্ষণ হিসেবে একাধিকবার বমি, পানির মতো পাতলা পায়খানা, মলের সঙ্গে রক্ত থাকা, শরীরে জ্বর বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, প্রস্রাব কম হওয়া, হজম শক্তি কমে যাওয়া, পেটব্যথা, খাবারে অনীহা ও বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

এই বর্ষা-পূর্ব সময়েই যে হারে সংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তা থেকে সহজেই বোঝা যায় সচেতনতা ছাড়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই প্রয়োজন সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া।

banner close
banner close