বুধবার

১২ নভেম্বর, ২০২৫ ২৮ কার্তিক, ১৪৩২

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসে দুদক ও স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান, আরএমও অবরুদ্ধ

কুষ্টিয়া, প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ ২০:২১

শেয়ার

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসে দুদক ও স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান, আরএমও অবরুদ্ধ
ছবি: বাংলা এডিশন

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করতে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও স্বাস্থ্য বিভাগ।

সোমবার দুপুরের দিকে দুদক ও স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্তকারী দল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে।

এদিকে ছাত্র-জনতার ক্ষোভের মুখে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম সিভিল কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

জানা গেছে, সোমবার বেলা ১১টার দিকে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার পাঁচ সদস্যের দল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যায়। দুপুর ১২টার দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি উচ্চপর্যায়ের দল ওই কার্যালয়ে উপস্থিত হয়। এ সময় উভয় দলের সদস্যরা সিভিল সার্জন শেখ মো. কামাল হোসেন, কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও হোসেন ইমামসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় দুদক সদস্যরা নিয়োগ পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোবাইল ফোন জব্দ করেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের দলের নেতৃত্ব দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী। এ ছাড়া দুদকের দলের নেতৃত্বে ছিলেন সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মইনুল আহসান রওশনী।

এদিকে তদন্ত কমিটির কাছে নিজের অবস্থান জানানোর পর আরএমও হোসেন ইমাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ত্যাগ করার চেষ্টা করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা তার ওপর চড়াও হয়। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়ে মারতে দেখা যায়। এই অবস্থায় হোসেন ইমাম আবারও সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিনি সিভিল সার্জন অফিসের ভেতরেই অবরুদ্ধ ছিলেন। তবে আরএমও হোসেন ইমাম নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার কথা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অস্বীকার করেছেন।

জানা গেছে, গত শুক্রবার কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাতটি ক্যাটাগরিতে ১১৫টি শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। এতে অংশ নেন ১৬ হাজার ৭৮৯ জন পরীক্ষার্থী। কিন্তু পরীক্ষার দিন ভোরে কুষ্টিয়া শহরের একটি বাড়িতে ২৫-৩০ চাকরিপ্রার্থীর রহস্যজনক প্রবেশ ও পরীক্ষার আগমুহূর্তে বের হওয়ার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বাড়িটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও হোসেন ইমামের। এ ঘটনার জেরে গত শনিবার দুপুরে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, ঘুষ-বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন একদল বিক্ষুব্ধ যুবক। এই অবস্থায় ২৫-৩০ জন পরীক্ষার্থীর একটি বাসা থেকে বের হওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি লেখেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন শেখ মো. কামাল হোসেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সাময়িক স্থগিত করা হয়। পরদিন রোববার সকাল থেকেও নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলসহ আবার পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্র-জনতা। পরে সিভিল সার্জনের আশ্বাসে তারা কর্মসূচি স্থগিত করে।

তদন্ত শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী জানান, তার নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তিনি আরও জানান, ঘটনার ব্যাপারে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বিশ্লেষণ করছেন তারা। পাশাপাশি আরএমও হোসেন ইমামের সংশ্লিষ্টতাসহ সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু জানাতে না পারলেও কিছু একটা যে ঘটেছে, সে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

দুদকের উপপরিচালক মইনুল আহসান রওশনী জানান, নিয়োগ পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজনের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।



banner close
banner close