বুধবার

১২ নভেম্বর, ২০২৫ ২৮ কার্তিক, ১৪৩২

এমবিবিএস ভর্তিতে জিপিএ কমানোর দাবি শিক্ষার্থী ও বিপিএমসিএ’র

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর, ২০২৫ ১৬:৫২

শেয়ার

এমবিবিএস ভর্তিতে জিপিএ কমানোর দাবি শিক্ষার্থী ও বিপিএমসিএ’র
ছবি: সংগৃহীত

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএর প্রভাব নিয়ে বিপাকে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন লাখো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। এবারের এইচএসসি ফলাফলের বিপর্যয়ের কারণে কাঙ্ক্ষিত জিপিএ না পাওয়ায় মেডিকেলে ভর্তির স্বপ্ন ভঙ্গের আশঙ্কা করছেন অনেকে। ফলে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ কমানোসহ শর্ত শিথিলের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)–ও ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসির মোট জিপিএ ৯ এর পরিবর্তে ৮ করার আহ্বান জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ‘এমবিবিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা২০২৫ অনুসারে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ‘ও লেভেল সমমান এবং এইচএসসি ‘এ লেভেল সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। দুটি পরীক্ষায় মোট জিপিএ কমপক্ষে ৯ থাকতে হবে এবং এইচএসসি ‘এ লেভেল সমমান পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ৪ থাকতে হবে।

২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৯টি সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২৪ সালে এই হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ এবার পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ পয়েন্ট।

এছাড়া এবার সারা দেশে জিপিএ৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর জিপিএ৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সেই হিসাবে এবারে জিপিএ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।

ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, উত্তরপত্রের যথাযথ মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে দুর্বল পারফরম্যান্স এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবেই এবারের ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। ২০০৪ সালের পর এই প্রথম এইচএসসিতে পাসের হার কমেছে; এরপর ২০০৫ সাল থেকে পাসের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলছেন, চলতি বছরের এইচএসসি ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ শর্ত ও স্কোরের ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়বেন। ভর্তি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৯ থাকায় অনেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগই পাবেন না, ফলে প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হবেন।

তাদের দাবি, ভর্তি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৯ এর পরিবর্তে ৮ নির্ধারণ করা হলে অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারবে। একইসাথে জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ৪ বাতিল করে ভর্তি প্রক্রিয়ায় লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এদিকে এবারের এইচএসসি ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে সৃষ্ট শিক্ষা সংকট উত্তরণে মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)।

গত ১৯ অক্টোবর বিপিএমসিএর সভাপতি ডা. শেখ মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন স্বাক্ষরিত এক লিখিত আবেদনে তারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট এই দাবি জানান।

আবেদনে বিপিএমসিএ উল্লেখ করে, ২০২৪২৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ৪ হাজার ৪৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ হাজার ৯৫ জন উত্তীর্ণ হন। তাদের মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের ৫ হাজার ৩৮০ আসনে ভর্তি সম্পন্ন হলেও ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ৬ হাজার ২৯৫ আসনের মধ্যে ৪৬৭টি আসন শূন্য ছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় ৭৬ হাজার ৮১৪ জন কম শিক্ষার্থী জিপিএ৫ পাওয়ায় ২০২৫২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি শর্ত অনুযায়ী এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে জিপিএ ৯.০০ নির্ধারিত থাকলে প্রায় অর্ধেক প্রার্থীই এই শর্ত পূরণ করতে পারবে না। ফলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে অন্তত ১ হাজারের বেশি আসন শূন্য থেকে যাবে। এতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো মারাত্মক আর্থিক ও প্রশাসনিক সংকটে পড়বে, যা দেশের চিকিৎসা শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এমতাবস্থায় ২০২৫২৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের শর্তে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের দুই পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৯.০০ এর পরিবর্তে ৮.০০ নির্ধারণের জন্য সবিনয়ে অনুরোধ জানিয়েছে বিপিএমসিএ।



banner close
banner close