রাজধানীর এক অভিজাত রেস্টুরেন্টে আজ সোমবার “শিশুশ্রম নিরসনে গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা: বর্তমান বাস্তবতা ও আমাদের প্রত্যাশা” শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), এডুকো বাংলাদেশ ও শাপলা নীড় বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে এই বৈঠকে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, শিশুঅধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থার প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদরা অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোছা. শারমিন আক্তার এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো: আব্দুল ওয়াদুদ।
প্রধান উপস্থাপক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুজজামান ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন এএসডির নির্বাহী পরিচালক এম এ করিম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এডুকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ ও শাপলা নীড় বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউমি ইয়াগিশিতা মাসুদা।
মূল আলোচনার বিষয়বস্তু
গোলটেবিল বৈঠকে শিশু শ্রমের বর্তমান অবস্থা, এর কারণ ও প্রতিকার নিয়ে নানা দিক তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা।
গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, শিশু শ্রমিকদের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বাড়াতে হবে। একইসাথে, শুধুমাত্র দিবস কেন্দ্রিক আয়োজন নয়, বরং সারা বছরজুড়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের মতামত:
গোলাম রাব্বানী (খবরের কাগজ): মা-বাবাদের সচেতন করতে হবে। নিউ মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা বাড়াতে হবে।
মাইদুর রহমান রুবেল (আরটিভি): শিশু অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে জেনে বা না জেনে। সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
জসিম মজুমদার (এনটিভি): সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী টিভি ব্যক্তিদের সচেতন করা জরুরি।
ফেরদৌস মোবারক (ডেইলি টাইমস অব বাংলাদেশ): শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারলে দেশও এগোবে না।
দাউদ হোসাইন রনি (দৈনিক কালের কণ্ঠ): গ্রামের মানুষদের সচেতন করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ওমর ফারুক (দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ): শিশু শ্রমিকের মা-বাবারা এই আলোচনায় নেই, তাদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে হবে।
মাহফুজুর রহমান মানিক (দৈনিক সমকাল): ৯৫% শিশু স্কুলে এলেও ১৬% ড্রপআউট শিশু শ্রমে নিযুক্ত হচ্ছে—এ বিষয়গুলো অনুসন্ধানীভাবে তুলে ধরতে হবে।
মিজানুর রহমান রিপন (ঢাকা এফ এম): গৃহশ্রমিক শিশুদের মা-বাবারা সচেতন নয়, তাদের উদ্দেশ্য করেও বার্তা তৈরি করতে হবে।
সরকারি প্রতিনিধিদের বক্তব্য:
তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোছা. শারমিন আক্তার বলেন, "বাল্যবিয়ে রোধে যেভাবে গণমাধ্যম প্রচার চালিয়েছে, শিশুশ্রম রোধেও একইভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।"
তিনি শিশু বিষয়ক পাতা বা বিভাগ চালুর প্রস্তাব নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে আলোচনার সম্ভাবনার কথাও জানান।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো: আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, "গণমাধ্যমকে আরও সক্রিয়ভাবে শিশুশ্রমের তথ্য তুলে ধরতে হবে।"
উপস্থিত অন্যান্য প্রতিনিধিগণ:
এই গোলটেবিল বৈঠকে ইউনিসেফ, আইএলও সহ শিশু অধিকার ও শিশুশ্রম নিরসন নিয়ে কাজ করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ও নেটওয়ার্কসমূহের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, শিশুশ্রম বন্ধে সরকার, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সংস্থা এবং সমাজের সকল পক্ষকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি শিশুশ্রমের পেছনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
আরও পড়ুন:








