গাইবান্ধার উত্তর প্রান্তে তিস্তা নদীবিধৌত জনপদ সুন্দরগঞ্জ। ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষ বসবাস করে। আধুনিক চিকিৎসাসেবার জন্য এই বিপুল জনগোষ্ঠীর একমাত্র নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল হলো সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সংকট, উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের সকল পদ শূন্য ও ৩য়-৪র্থ শ্রেণির অনেক পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের সেবা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। ফলে রোগীরা দ্রুত এবং মানসম্মত চিকিৎসা পাচ্ছেন, যা স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। তবে অপারেশন থিয়েটার পুরো প্রস্তুত থাকলেও গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সিজারিয়ান অপারেশন এখন বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আরএমও সহ মেডিকেল অফিসার মাত্র পাঁজন, কনসালটেন্ট (এনেস্থেসিয়া) একজন, ডেন্টাল সার্জন একজন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা একজন দায়িত্ব পালন করছেন। সীমিত চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাকের তত্ত্বাবধানে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১০০-এর বেশি রোগীর আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. আতিয়ার সোহাগ ইনডোর ও জরুরি বিভাগের রোগীদের নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন। তিনি আল্ট্রাসনোগ্রাম করছেন এবং স্টোর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেবার মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। সিনিয়র স্টাফ নার্স আখি, আফরিন ও ফাতেমা এই কাজে সহযোগিতা করছেন। আপাতত সপ্তাহে রবি থেকে বুধবার এই চারদিন আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
ডেন্টাল সার্জন ও ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট নিয়মিতভাবে দাঁত ও মাড়ির রোগের চিকিৎসা প্রদান করছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ল্যাবরেটরী রুমটি এসি করা এবং সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড করা হয়েছে। এখানে অটোমেটেড সেল কাউন্টার, সেমি-অটো বায়োকেমিস্ট্রি এনালাইজার, ইলেকট্রোলাইট এনালাইজার ও সেন্ট্রিফিউজ মেশিন সংযোজন করা হয়েছে। ব্লাড ব্যাংকের জন্য ফ্রিজও স্থাপন করা হয়েছে। ফলে কমপ্লেক্সে আরও বিস্তৃত ধরণের রক্তের পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে, যা রোগীদের সেবার মানকে আরও উন্নত করেছে।
এক্স-রে ও ইসিজি পরীক্ষা নিয়মিত হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে ১২০-১৫০টি এক্স-রে এবং ৭০-১০০টি ইসিজি পরীক্ষা করা হয়। এনসিডি কর্নারে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রেজিষ্ট্রেশন করে ১ মাসের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। গর্ভবতী মহিলাদের রেজিষ্ট্রেশন ও এএনসি কার্ড দেওয়া হচ্ছে, চেক-আপ করে এক মাসের আয়রন-ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে নিয়মিত ফোনে পরামর্শ ও নরমাল ডেলিভারি করানোর জন্য উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে, ফলে নরমাল ডেলিভারি সেবা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি ৩০-৪৫ বছর বয়সী মহিলাদের বিনামূল্যে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সারের পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নিয়মিত এম্বুলেন্স সেবা চলমান রয়েছে এবং প্রতি মাসে গড়ে ৪০-৪৮ জন রেফার্ডকৃত রোগীদের সরকারি ফি তে এম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
রোগীরা জানিয়েছেন, সীমিত চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য কমপ্লেকার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও ডাক্তার ও নার্সরা যত্নসহকারে রোগীদের পরীক্ষা করছেন, সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন এবং ফলাফল দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছেন। এই মনোযোগী সেবা রোগীদের মধ্যে নিরাপত্তা, নির্ভরযোগ্যতা ও সন্তুষ্টি বাড়িয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক বলেন, ‘সীমিত জনবল থাকা সত্ত্বেও আমরা চেষ্টা করি রোগীদের দ্রুত ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে। আমাদের স্টাফরা যত্নসহকারে রোগীদের দেখাশোনা করেন, যাতে প্রত্যেক রোগী নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা পান। সীমিত চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও আমাদের প্রচেষ্টা রোগীদের স্বস্তি ও আস্থার সেবা হিসেবে প্রতিফলিত হচ্ছে। তবে অপারেশন থিয়েটার পুরো প্রস্তুত থাকলেও গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সিজারিয়ান অপারেশন এখনও বন্ধ রয়েছে এবং বিষয়টি বারবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, নয় মাস আগে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে ডা. দিবাকর বসাকের যোগদানের পর এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম চালু করা, প্যাথলজিতে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা চালু করার মাধ্যমে সার্বিক চিকিৎসা সেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও ইনডোরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
আরও পড়ুন:








