বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ভর্তিতে চালু হওয়া অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে অনেকে ভর্তি থেকে বিরত থাকছেন, যার ফলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪৬৭টি আসন শূন্য পড়ে রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে মেডিকেল ভর্তি প্রক্রিয়ায় অটোমেশন চালু করে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম অনুযায়ী এলগরিদমের মাধ্যমে বিভিন্ন কলেজ বরাদ্দ করা হয়। যদিও প্রথমে ৫টি চয়েস রাখার সুযোগ থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্য ৬০টি ও মেয়েদের জন্য ৬৬টি চয়েস করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাস্তবতা ও সক্ষমতার সাথে মিলিয়ে পছন্দমতো কলেজ পায় না।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং সচেতন অভিভাবকদের অভিযোগ, এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ও স্বাধীনতা হরণ করছে। কেউ ঢাকায় থেকেও কলেজ পেয়েছে দূরবর্তী জেলায়, আবার কেউ গ্রাম থেকে পেয়ে গেছে ব্যয়বহুল অভিজাত কলেজ, যা অনেকের জন্য অসহনীয় বোঝা।
অভিভাবকরা বলছেন, যারা নিজ খরচে বেসরকারি মেডিকেলে পড়বে, তারা যেনো তাদের পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানেই পড়তে পারে, এটা তাদের মৌলিক অধিকার। একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার মেয়ে আমিরা তাসনিম ডাক্তার হতে চেয়েছিল। কিন্তু পছন্দের কলেজ না পেয়ে এখন সে সেই স্বপ্ন থেকেই সরে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, এ বছর এক লাখ ৩১ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাস করেছে মাত্র ৬০ হাজার ৯৫ জন। সরকারি মেডিকেলের ৫,৩৮০টি আসন পূরণ হলেও, বেসরকারি ৬৭টি কলেজে ৬,২৯৫টি আসনের মধ্যে শত শত সিট খালি রয়ে গেছে।
এই পদ্ধতির ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। পূর্বে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা থেকে বহু শিক্ষার্থী আসলেও এখন তাদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে দেশ বিদেশি মুদ্রা অর্জনের সুযোগও হারাচ্ছে।
প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর বলেন, ‘অটোমেশন পদ্ধতি শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের জন্য বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পদ্ধতি যেন বেসরকারি মেডিকেল সেক্টর ধ্বংসের হাতিয়ার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব পক্ষের স্বার্থ বিবেচনা করে আগের পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার কথাও ভাবা যেতে পারে।’
আরও পড়ুন:








