শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, তিনি হাসপাতালকে ব্যক্তিগত ব্যবসায় পরিণত করেছেন এবং রোগীদের পছন্দসই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে কমিশন নেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ডা. মামুন এক রোগীর স্বজনকে হুমকি দিয়ে বলছেন, “আমার বাড়ি শৈলকূপা পৌরসভায়, লন্ডন না। তোর বাড়ি কোথায়?” একই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি এক নারীকে “বেয়াদব” বলে হাসপাতাল থেকে বের করে দিচ্ছেন। ভিডিওর আরেক অংশে একজন রোগীকে বিকেলে চেম্বারে এসে টাকা দিয়ে দেখানোর কথা বলতেও শোনা যায়।
হেনস্তার শিকার এক রোগীর স্বজন জানান, তার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর কিছু পরীক্ষা করতে বলা হয়। তিনি একটি প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে রিপোর্ট করালে আরএমও তা না দেখে চলে যান। পরে রিপোর্ট দেখাতে গেলে ‘বেয়াদব’ বলে তুই-তুকারি করে বের করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী ও স্বজনের অভিযোগ, ডা. মামুন বেশিরভাগ সময় নির্দিষ্ট ক্লিনিক থেকে কমিশন নেন। এজন্য সামান্য অসুস্থ রোগীকেও ভয় দেখিয়ে পছন্দের ক্লিনিকে পাঠান। হাসপাতালে অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রেখে এসব ক্লিনিকে নিজে অপারেশন করেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি রোগী দেখার জন্যও অর্থ নেন এবং অন্য চিকিৎসকদের রাউন্ডে যেতে বাধা দেন। অভিযোগ রয়েছে, রাউন্ডের সময় তার সঙ্গে ক্লিনিক দালালরা থাকে এবং রোগীদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে অতিরিক্ত বিল চাপিয়ে দেন।
স্থানীয়রা দাবি করেন, প্রতিটি প্রেসক্রিপশনের ওপর টেস্টের মূল্য উল্লেখ করে পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়। নিম্নমানের ওষুধ কোম্পানির ওষুধ লিখে আর্থিক সুবিধা নেন। হাসপাতালের কোয়ার্টারে ব্যক্তিগত চেম্বার খুলে ফি নিয়ে রোগী দেখায় সাধারণ মানুষ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন মুঠোফোনে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে বলি, তখন মাথা গরম ছিল তাই তুই-তুকারি করেছি। কোয়ার্টারে বসে ফি নেওয়ার অভিযোগও মিথ্যা। সব ক্লিনিকের রিপোর্ট ভালো না, তাই রোগীদের বলে দিই।”
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. মো. কামরুজ্জামান বলেন, “একজন আরএমও’র রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে এমন আচরণ দুঃখজনক। পছন্দের ক্লিনিকের রিপোর্ট ছাড়া দেখা এবং কোয়ার্টারে ফি নিয়ে রোগী দেখা—দুটিই অনৈতিক। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে একাধিক গণমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রকাশ হলেও কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:








