শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট চরমে। ৫০ শয্যার এ সরকারি হাসপাতালটি কার্যত চলছে একজন চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করে। প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ জন রোগী বহির্বিভাগে আসছেন, আর ভর্তি থাকছেন অন্তত ৭০ থেকে ৮০ জন। এত রোগীর চাপে একাই হিমশিম খাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাফিজুর রহমান মিঞা।
গত বুধবার (৬ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৪১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত মাত্র ২ জন। তাঁদের একজন প্রশাসনিক দায়িত্বে, অপরজন দন্ত চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। বাকি চিকিৎসকরা দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে প্রেষণে রয়েছেন। ফলে স্বাস্থ্যসেবার মানে নেমেছে মারাত্মক অবনতি।
চিকিৎসক সংকটে বন্ধ রয়েছে নিয়মিত অপারেশন কার্যক্রম, যার ফলে ব্যবহৃত না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, হাসপাতাল চত্বরে সক্রিয় একটি দালালচক্র এবং কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা নিয়মিত চিকিৎসকদের কক্ষে প্রবেশ করে ওষুধ লিখে দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করেন। পাশাপাশি, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের রোগীদের অগ্রাধিকার দিতে চিকিৎসকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। ফলে চিকিৎসকদের পেশাগত পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অনেকেই যোগদান করলেও কিছুদিনের মধ্যে স্থানান্তরের আবেদন করছেন।
একাধিক রোগীর স্বজন জানান, “২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার চিকিৎসক রোগীদের দেখতে আসেন। চিকিৎসক বেশি থাকলে আমরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারতাম। বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাফিজুর রহমান মিঞা বলেন, “একজনের পক্ষে এত রোগীর চিকিৎসা সেবা দেওয়া বাস্তবেই কঠিন। আমি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। সর্বশেষ সিভিল সার্জনের মাধ্যমে তিনজন চিকিৎসক নিয়োগের আদেশ দেওয়া হলেও কেউ এখনো যোগদান করেননি।”
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. রেহান উদ্দিন বলেন, “তিনজন চিকিৎসককে গোসাইরহাটে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা যোগ না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, হাসপাতাল দালালমুক্ত রাখতে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। স্বাস্থ্যসেবায় কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।”
আরও পড়ুন:








