রবিবার

২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩ পৌষ, ১৪৩২

ক্লিনিকে আসেন ওষুধ নিতে, ফিরতে হয় খালি হাতে

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১ জুলাই, ২০২৫ ১২:১০

শেয়ার

ক্লিনিকে আসেন ওষুধ নিতে, ফিরতে হয় খালি হাতে
ছবি সংগৃহীত

ভোরে জ্বর উঠেছিল মর্জিনা খাতুনের। শরীর ব্যথায় চলাফেরা করতেও কষ্ট হচ্ছিল। স্বামী বাড়ি ছিলেন না, তবু ছেলের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলেন বাড়ির পাশের টুনিপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে।সারিবদ্ধ বেঞ্চে বসে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ডাক পড়ল। চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন। তবে ওষুধ নিতে গিয়ে জানালেন কোনোটিই নেই। হতাশ চোখে ছেলেকে বললেন,

“চলরে বাবা, এখানে কিছুই নাই।” এই দৃশ্য শুধু মর্জিনার একার নয়। নাটোরের বাগাতিপাড়ায় এমন চিত্র এখন প্রতিদিনের ঘটনা। ওষুধ নেই ,আছে শুধু ক্লিনিকের ওষুধ রাখার ফাঁকা তাক, রোগীদের দীর্ঘশ্বাস আর প্রতীক্ষা।উপজেলার ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় প্রতিটিতেই দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ সংকট চলছে। প্যারাসিটামল, ওআরএস, ফ্ল্যাজিল, আয়রন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, এমনকি অ্যান্টিবায়োটিকের মতো মৌলিক চিকিৎসাসামগ্রীও নেই অনেক মাস ধরে।চাঁদপুর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা পুরোনো, তাই আগে মাঝে মাঝেই আসতেন ক্লিনিকে ।“আগে এখান থেকে ফ্রি ওষুধ পেতাম। এখন দোকান থেকে কিনতে হয়। প্রতিদিনই পয়সা যাচ্ছে। সংসারে খরচ বাড়ছে।” সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ ধরনের ওষুধ থাকার কথা। গর্ভবতী নারীর জন্য আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড, শিশুদের জন্য ওআরএস, সাধারণ রোগের জন্য ব্যথানাশক, জ্বর ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধসহ। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ক্লিনিকেই এখন এই মৌলিক ওষুধগুলো নেই। ক্লিনিকের এক স্বাস্থ্য কর্মী বলেন, “শেষবার ওষুধ এসেছিল ছয় মাস আগে। তখন যা এসেছিল, তা এক মাসেই শেষ হয়ে যায়। এরপর আর আসেনি কিছুই।”বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সূচনা মনোহরা বলেন,“বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশাকরি শিগগির ওষুধ সরবরাহ শুরু হবে।”তবে এই আশার পেছনে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।শুধু অসুখ নয়, এই ওষুধ সংকট যেন তাদের মনে জমিয়ে দিচ্ছে আরও এক ধরনের বিষন্নতা ‘আমরা অসুস্থ হলেও কি দেখার কেউ নেই?’

কমিউনিটি ক্লিনিক শুধু ভবন নয়, তা গ্রামীণ মানুষের শেষ আশ্রয়। সেই আশ্রয়ে যখন মৌলিক সেবারও ঘাটতি দেখা দেয়, তখন শুধু ওষুধ নয়, ভেঙে পড়ে আস্থার প্রাচীরও।



banner close
banner close