বিপিএমসিএ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন প্রক্রিয়া বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)-এর ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ও তফসিল প্রণয়ন থেকে শুরু করে ভোটার তালিকা প্রস্তুত পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়ম লঙ্ঘন, পক্ষপাত ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন একাধিক প্রার্থী ও নির্বাচন বোর্ড সদস্য।
বিপিএমসিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)'র ১১৫ তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবং বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ১৯৯৪ এর বিধি-১৪(১) এবং এসোসিয়েশনের সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধির ২৭ নং অনুচ্ছেদের অধীনে ২ বছর (২০২৫-২০২৭) মেয়াদের জন্য ৩ (তিন) সদস্য বিশিষ্ট (১ জন চেয়ারম্যান ও ২ জন সদস্য) নির্বাচন বোর্ড গঠন করা হয়। গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. মঈনুল আহসানকে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মো. আফিকুর রহমান ও খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. মোস্তফা কামালকে সদস্য করা হয়।
সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন সদস্যের নির্বাচন বোর্ড গঠিত হলেও, সাম্প্রতিক নির্বাচনী কার্যক্রমে শুধুমাত্র চেয়ারম্যান ডা. মো. মঈনুল আহসান এককভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগকারীদের দাবি, নির্বাচনী তফসিল, ভোটার তালিকা, প্রার্থী যাচাই-বাছাইসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে শুধুমাত্র সভাপতির স্বাক্ষর থাকলেও দুই সদস্যের স্বাক্ষর অনুপস্থিত।
অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচন বোর্ডের ঘোষিত পুনঃ তফসিল অনুযায়ী ১৫ জুন ২০২৫ এ মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই ও বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর রয়েছে। অন্য দুজন সদস্যের নাম থাকলেও তারা সেখানে স্বাক্ষর করেন নি। বিপিএমসিএ-র সংঘ বিধির ২৭ ধারা মোতাবেক নির্বাচন বোর্ড তিন সদস্য বিশিষ্ট। সুতরাং অন্য দুজন সদস্য ব্যতীত চেয়ারম্যান এককভাবে নির্বাচন বোর্ডকে প্রতিনিধত্ব করেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক প্রার্থী।
এছাড়া পুনঃ তফসিল অনুযায়ী ১৮ জুন বৈধ মনোনীত প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানেও শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর রয়েছে। একইসাথে প্রকাশিত খসড়া প্রার্থী তালিকা এবং বৈধ মনোনীত প্রার্থীর তালিকার মাঝেও বেশ পার্থক্য রয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রকাশিত খসড়া প্রার্থী তালিকা ও চূড়ান্ত তালিকার কিছু প্রার্থীর নাম হঠাৎ যুক্ত হয়েছে, আবার কারো নামের পাশে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখা গেছে। যেমন রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে খুলনার একজন প্রার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনে নানা অসংগতির কারণে নির্বাচন বোর্ডের সভাপতির সাথে একমত না হওয়া এবং সভাপতির একক কর্তৃত্ব শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন কয়েকজন প্রার্থী।
যুগ্ম সম্পাদক পদের এক প্রার্থী বলেন, নির্বাচন বোর্ডের অন্য দুইজন সদস্যকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের বৈধ প্রার্থী তালিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চেয়ারম্যান একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। নির্বাচন বোর্ডের তিন সদস্য স্বাক্ষরিত বৈধ প্রার্থী তালিকা পুনরায় প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জুন ২০২৫ তারিখে নির্বাচন বোর্ড মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের সময় ইতিপূর্বে ঘোষিত নির্বাচনী নিয়মাবলীর ৫ নং ধারা অনুযায়ী (জমা দেওয়া মনোনয়ন পত্রে প্রার্থী/প্রস্তাবক/সমর্থনকারীর নামের বানান ভুল, ওভার রাইটিং করা, ইরেজার দিয়ে কোন লেখা মোছার চেষ্টা করা, লেখার কোন কাটাকাটি করলে বা কোন ভুল তথ্য প্রদান করলে মনোনয়ন পত্র বাতিল বলে গন্য হবে) বেশ কিছু মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে যায়। নির্বাচনী নিয়মাবলীর ধারা অনুযায়ি নির্বাচন বোর্ডের ২ সদস্য তাদের সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকতে চান, কিন্তু নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান তাতে সম্মতি দেননি। ১৫ জুন প্রকাশিত খসড়া প্রার্থী তালিকায় নির্বাচন বোর্ডের অন্য সদস্যরা স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে শুধুমাত্র সভাপতি স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে শুধুমাত্র সভাপতির স্বাক্ষরে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, যার সাথে অন্য দুজন সদস্য একমত নন। যেহেতু সংঘ বিধির ২৭ ধারা অনুযায়ী তিন জন মিলেই নির্বাচন বোর্ড, তাই শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের সম্মতিকে নির্বাচন বোর্ডের সিদ্ধান্ত বলা যায় না উল্লেখ করেছেন নির্বাচন বোর্ডের অন্য দুই সদস্য।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ২১ জুন ২০২৫ তারিখে নির্বাচন বোর্ড কার্যালয়-র স্মারক বিপিএমসিএ/২০২৫/১০/৪৯৮ এ শুধুমাত্র নির্বাচন বোর্ডের সভাপতি স্বাক্ষরিত বৈধ মনোনীত প্রার্থীর ২টি চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তবে প্রকাশিত সেই দুইটি তালিকায় একটির সাথে অন্যটির পার্থক্য রয়েছে। একটি তালিকায় আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. মাহফুজা জেসমিনের নাম এবং শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে ডা. মো. এমদাদুল হকের নাম। অপর তালিকায় শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও সমাজ কল্যাণ সম্মাদক পদে ডা. মাহফুজা জেসমিন এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. মো. এমদাদুল হক।
বিভিন্ন অনিয়ম সত্ত্বেও আগামী ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তফসিল রয়েছে। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন প্রার্থীরা। একটি নির্দিষ্ট প্যানেলকে সুবিধা দিতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি এবং নির্বাচন বোর্ডের দুই সদস্যকে উপক্ষো করে সভাপতি নানা বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নির্বাচন বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন বোর্ডের সদস্য হিসেবে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কয়েকটি মিটিং সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের সময় কয়েকজন প্রার্থীর নামের বানান ভুল, ওভার রাইটিং করাসহ বিভিন্ন অসংগতি ধরা পড়ে। নির্বাচন বোর্ডের তিনজনের সম্মতিক্রমে চারজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয় এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে আমরা একমত পোষণ করি। পরবর্তীতে বাতিলকৃত প্রার্থীর নাম দিয়ে বৈধ এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা করায় আমরা দুইজন সদস্য স্বাক্ষর করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করি। সভাপতি নিজের দায়িত্বে এককভাবে স্বাক্ষর করে বৈধ এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে, যার সাথে আমরা একমত নয়। বাকি কর্মকান্ডের সাথে আমরা জড়িত নয়।
অন্যদিকে চেয়ারম্যান ডা. মো. মঈনুল আহসান অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমরা নিয়মের বাইরে কিছু করিনি। সব কিছু নিয়ম মেনেই হয়েছে।
আরও পড়ুন:








