
৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বুকে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধ সেবনের পরও মাত্র ১১ শতাংশ রোগীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ৭৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসার আওতায় নেই এবং ৫০ শতাংশ জানেন না যে তারা এই রোগে আক্রান্ত।
উচ্চ রক্তচাপ কী
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন (Hypertension) হচ্ছে এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে রক্তধমনীর (artery) দেয়ালের ওপর রক্তের চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায়। এই চাপ যদি দীর্ঘ সময় ধরে স্বাভাবিকের বেশি থাকে, তবে এটি হৃদযন্ত্র, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখের ক্ষতি করতে পারে।
স্বাভাবিক রক্তচাপের মান
- সিস্টোলিক (ওপরের মান) : ১৪০ mmHg-এর নিচে।
- ডায়াস্টোলিক (নিচের মান) : ৯০ mmHg-এর নিচে, যেটিকে বলা হয় ১২০/৮০ mmHg
যখন রক্তচাপ হয়
- ১৪০/৯০ mmHg বা তার বেশি, তখন একে উচ্চ রক্তচাপ ধরা হয়।
এটি কেন নীরব ঘাতক
উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক, কারণ এর কোনো সুস্পষ্ট উপসর্গ থাকে না। একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও বুঝতেই পারেন না এবং হঠাৎ করেই স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক কিংবা কিডনি বিকল হওয়ার মতো মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের প্রকারভেদ
- অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ থাকে না।
- বয়স বাড়া, পারিবারিক ইতিহাস, অনিয়মিত জীবনযাপন ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।
মাধ্যমিক (Secondary) হাইপারটেনশন
এটি অন্য কোনো রোগ বা শারীরিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে, যেমন কিডনি রোগ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, কিছু ওষুধ ইত্যাদি।
উচ্চ রক্তচাপ কীভাবে কাজ করে
রক্ত যখন হার্ট থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে পৌঁছায়, তখন একটি চাপ সৃষ্টি হয়। যদি রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ে বা রক্তচাপের পরিমাণ বেড়ে যায়, তবে হৃৎপিণ্ডকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, যার ফলে হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত সঞ্চালন বিঘ্নিত হয়।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও পরামর্শ
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট জোরে হাঁটা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ, সুষম খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন এবং নিয়মিত ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।
ধূমপান ও উচ্চ রক্তচাপ
ধূমপানের ফলে নিকোটিন রক্তনালিকে সংকুচিত করে, যা রক্তচাপ বাড়ায়। এমনকি প্যাসিভ স্মোকিংও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
DASH ডায়েট ও খাদ্যাভ্যাস
DASH (Dietary Approaches to Stop Hypertension) ডায়েট উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে ফল, শাকসবজি, সম্পূর্ণ শস্য, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার এবং কম সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে।
উপসংহার
উচ্চ রক্তচাপ একটি সহজে নির্ণেয় ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ হলেও অনেক মানুষ এটি সম্পর্কে অবহিত নয়। তাই এ অধ্যায়টি আমাদের জানিয়ে দেয়, ‘উচ্চ রক্তচাপ মানে শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি এক ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি, যা সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য।’
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ
আরও পড়ুন: