
গরমে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। সেইসঙ্গে সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। অতিরিক্ত গরমে কারো কারো শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, ফুসফুসেও নানারকম সংক্রমণের সৃষ্টি হয়। এসব বিষয়ে সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মনির হোসেন প্রশ্ন উত্তরে বলেন।
প্রশ্ন : প্রচণ্ড গরমে অনেকেই বাইরে থেকে এসেই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খায়। এতে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : গরমের মধ্যে বাইরে থেকে এসেই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা হুট করে কমে যায়। ফলে শরীরে বিপরীত ঘটনা ঘটে। এতে গলা খুসখুস থেকে শুরু করে ঠান্ডা লাগা পর্যন্ত অনেক আশঙ্কাই আছে। শরীরের তাপমাত্রা সাধারণভাবে ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করার কারণে দেহের কিছু অংশের তাপমাত্রা হুট করে কমে যায়। ফলে নিয়মিত এ রকম ঠান্ডা পানি খাওয়ার ফলে মিউকাস বা শ্লেষ্মা বেড়ে টনসিলের সমস্যা, মাইগ্রেনের সমস্যা, দাঁতে ব্যথা, খাদ্যনালির সমস্যা, সর্দি-কাশি ও জ্বরের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
প্রশ্ন : দাবদাহ ও অতিরিক্ত গরমে হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্ট হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
উত্তর : এই সময়টায় শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, বারবার বাইরে বের হলে এবং ঘরে ঢুকলে পরিবেশের তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে, যা শরীর ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারে না। এটা ভাইরাল সংক্রমণ অ্যাজমার সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে। ডিহাইড্রেশনের সমস্যা গরমকালে বেড়ে যায়, যার ফলে পেশি সংকোচন বা মাসল ক্র্যাম্প বেড়ে যায়। এর ফলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এ ছাড়া এসির বাতাস ঘরের পরিবেশ শুষ্ক করে দেয়, যার ফলে অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন : গরমে ঘরের ভেতর দূষণ (Indoor Pollution) ফুসফুসে কী ধরনের প্রভাব ফেলে?
উত্তর : বাইরের বায়ুদূষণের সঙ্গে সঙ্গে ঘরের বায়ুদূষণের (Indoor Pollution) নানা ধরনের কারণে হতে পারে, যা ফুসফুসের অনেক ক্ষতিসাধন করে। যেমন রান্নার তেল, কীটপতঙ্গ দূর করার কয়েল ও মোম অথবা রাসায়নিক পদার্থসম্পন্ন ঘর পরিষ্কার করার সামগ্রী ব্যবহার করলে তার মাধ্যমে ঘরের ভেতরের বায়ু দূষিত হতে পারে। এগুলো সবই ফুসফুসের রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া ধূমপানও ঘরের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ।
প্রশ্ন : শিশুদের ফুসফুসজনিত সমস্যা থেকে গরমে কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া যায়?
উত্তর : অতিরিক্ত গরমের কারণে বেশিরভাগ শিশুই জ্বর, ডায়রিয়া, বমি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই শিশুদের প্রতি একটু বেশি খেয়াল রাখা উচিত। গরমে শিশুদের বাইরে যেতে না দিয়ে ঠান্ডা পরিবেশে রাখা উচিত। গরমের কারণে যে ঘাম হয়, তা শরীরে শুকিয়ে ফেলা উচিত নয়। শরীর থেকে যে পরিমাণ প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যাচ্ছে, তা পূরণের জন্য সবসময় তরল খাবার খাওয়ানো উচিত। শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানো উচিত। অতিরিক্ত গরমে এসির মাধ্যমে শরীর ঠান্ডা করা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।
প্রশ্ন : বদ্ধ ও ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে ফুসফুস সুস্থ রাখতে কোন ঘরোয়া উপায়গুলো কার্যকর?
উত্তর : ধূমপান করা যাবে না। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে ও প্রচুর পানি পান করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। বারবার হাত ধোয়া উচিত। যতটা সম্ভব অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বর্জন করতে হবে। বায়ুপথ দূষিত করে এমন দূষক, যেমন সিগারেটের ধোঁয়া, রাসায়নিক বস্তু, ছত্রাক, মোল্ড, ধুলাবালি ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: