
বাংলাদেশ বেসরকারী মেডিকেল কলেজের মালিকদের সংগঠন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। সংগঠনের বর্তমান সভাপতি এম এ মুবিন খান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন।
পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সাথে মুবিন-মোয়াজ্জেমের ঘনিষ্ঠতার বিবরণ ইতিমধ্যেই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য সংগঠন থেকে স্বৈরাচারের সহযোগীদের বিতাড়িত করা সম্ভব হলেও বিপিএমসিএ-তে তারা অবস্থান করছেন বহাল তবিয়তে এবং তাদের অবস্থান বিস্তৃত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।
বিপিএমসিএ এর সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধি অনুযায়ী নির্বাচিত কর্মকর্তাগণ তিন মেয়াদের অধিক স্বপদে বহাল থাকতে পারবেন না। তবে তাদের মেয়াদকাল আরো বাড়ানোর জন্য সাধারণ সম্পাদক চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেনারেল মিটিং আহ্বান করেছেন। যার ১ নং আলোচ্য সূচি এই ধারা পরিবর্তন।
অভিযোগ আছে, বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি শুরু থেকেই সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধি লঙ্ঘন করে সংগঠন পরিচালনা করে আসছেন। এছাড়া সংঘ বিধি-৫ অনুযায়ী বাৎসরিক চাঁদা ২৪ হাজার টাকা হলেও ২ লাখ টাকা আদায় করেছে কতৃপক্ষ। এ ব্যাপারে কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে আপত্তি জানানো হলে অতিরিক্ত জেনারেল মিটিং এর ২ নং আলোচ্য সূচিতে রাখা হয়েছে চাঁদা পুনঃনির্ধারন।
সংঘ বিধি-২৫ অনুযায়ী, কার্যনির্বাহী কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক বিভাগওয়ারী ৩ জন (চট্রগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট) এবং নির্বাহী সদস্য ৩ জন। কিন্তু ২০২৩ ও ২০২৪ সালের কমিটিতে বিভাগওয়ারী সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছে রাজশাহী, রংপুর ও চট্রগ্রাম থেকে। সিলেটের পরিবর্তে রংপুর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৫ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের পর পুনঃগঠিত কমিটিতে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ থেকে। এই কমিটিতে চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর কার্যনির্বাহী সদস্য ৩ জনের পরিবর্তে করা হয়েছে ৪ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘ বিধি-১৬ (গ) অনুযায়ী কমপক্ষে ৫ বা ততোধিক সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে ২০২৩ ও ২০২৪ মেয়াদের কমিটিতে উপদেষ্টা আছেন ৪ জন। উপদেষ্টারা হলেন জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাতুন, ডা. মোঃ এনামুর রহমান, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ও ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন চিকিৎসা বিশেষাজ্ঞ জানিয়েছেন, উপদেষ্টা পরিষদে যে চারজন ব্যক্তি রয়েছে। সেখানে কমপক্ষে আরও একটি জায়গা খালি রাখা হয়েছে। যা পুরোপুরি সংঘ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে বিপিএমসিএ এর সভাপতি এম এ মুবিন খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ কতিপয় শর্তসাপেক্ষে ২ নভেম্বর ২০২৪ থেকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ। উক্ত শর্তসমূহের মধ্যে নির্বাচন বোর্ড গঠন এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা উল্লেখযোগ্য।
প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বিপিএমসিএ এর নির্বাচন তফসিল ঘোষণা দেখানো হলেও, প্রকৃতপক্ষে এসোসিয়েশনের সকল সদস্যের কাছে তা প্রেরণ করা হয়নি। বিপিএমসিএ-এর সভাপতি তা স্বীকার করেছেন। তবে ২৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ঘোষিত নির্বাচনী তফসিলে বেশ কিছু অসংগতি পরিলক্ষিত হয়েছে, যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের সচিবকে অবহিত করা হয়েছে।
পরবর্তীতে নির্বাচন বোর্ড আরেকটি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে, যেখানে একই স্মারক নম্বর ব্যবহার করা হলেও তারিখ উল্লেখ রয়েছে ২০ অক্টোবর ২০২৪। একই স্মারকে দুটি ভিন্ন তারিখে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা এক ধরণের প্রতারণা। এছাড়াও সর্বশেষ নির্বাচনী তফসিলেও রয়েছে অসংগতি। নির্বাচনি তফসিলের ১৩ নং ক্রমিকে উল্লেখ রয়েছে ভোট গ্রহণের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০২৫ কিন্তু ১৫ (৩) নং ক্রমিকে উল্লেখ রয়েছে ভোট গ্রহণ ১২ জানুয়ারি ২০২৫।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিপিএমসিএ এর নির্বাচনী বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোকাররম আলী ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া বিপিএমসিএ’র সভাপতি মুবিন খান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কার্যনির্বাহী পর্ষদের মেয়াদ আরো ৯০ দিন বৃদ্ধির আবেদন করেছেন। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব পুলক কুমার মন্ডল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বর্তমান পরিচালনা পর্যদের সময় বৃদ্ধির অন্যতম শর্ত ছিল এই মেয়াদের আর সময় বৃদ্ধি করা হবে না।
এদিকে বিপিএমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন আগামী ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে বার্ষিক সাধারণ সভা ডেকেছেন। সভার ৩ নং আলোচ্য সূচীতে ২০২৪-২০২৬ মেয়াদে ২ বছরের জন্য কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের বিষয়টি রাখা হয়েছে। তবে সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অপারগতা এবং সেই কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব পুলক কুমার মন্ডলকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
বিপিএমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘বিপিএমসিএ’র নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিল ও বিতরণের তারিখ নিয়ে অসত্য তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে, এগুলো ঠিক নয়। আর ১০ জানুয়ারি যে সভা ডাকা হয়েছে, সেটি বার্ষিক সাধারণ সভা মাত্র। সেখানে কোনো কমিটি গঠন করা হবে না।’
আরও পড়ুন: