সোমবার

২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৪ পৌষ, ১৪৩২

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সড়ক নির্মাণ কাজে প্রকাশ্য অনিয়মের অভিযোগ

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৪:২৭

শেয়ার

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সড়ক নির্মাণ কাজে প্রকাশ্য অনিয়মের অভিযোগ
ছবি: বাংলা এডিশন

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌরসভার চলমান সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ শেষ হওয়ার আগেই চরম অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মাণের চিত্র প্রকাশ্যে এসেছে। প্রায় ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সড়কের কার্পেটিং কাজ চলমান থাকলেও বিভিন্ন স্থানে হাতের স্পর্শেই পিচ উঠে যাচ্ছে। কোথাও পা দিয়ে নাড়লেই পিচ খুলে পড়ছে, আবার কোথাও শিশুরা খেলতে খেলতেই পিচ তুলে ফেলছে—এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার খোদাদাতপুর এলাকায় সদ্য কার্পেটিং করা সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচের স্তর অত্যন্ত দুর্বল। যথাযথ রোলার ও কম্প্যাকশন না হওয়ায় পিচ সঠিকভাবে বসেনি। নির্ধারিত পুরুত্ব ও সংযোগ বজায় না থাকায় যেকোনো সময় পুরো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আইআইডিবি (নগর উন্নয়ন) প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোট ৫ দশমিক ১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস রুনা এন্টারপ্রাইজ। চারটি প্যাকেজে বাস্তবায়নযোগ্য এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় চলতি বছরের জুলাই মাসে, যা ২০২৬ সালের জুলাই মাসের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত। বর্তমানে কাজের অগ্রগতি প্রায় ৪০ শতাংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজের শুরু থেকেই এক নম্বর ইটের পরিবর্তে নিম্নমানের তিন নম্বর ইট ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক স্থানে যথাযথভাবে খোয়া না দিয়ে শুধু বালু ভরাট করে তার ওপর নামমাত্র খোয়া ছিটিয়ে দায়সারা কাজ করা হয়েছে। এসব অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েও কাজের মানে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন আসেনি। বরং সেই অবস্থাতেই দ্রুত রোলার চালিয়ে কার্পেটিং শুরু করা হয়।

খোদাদাতপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবু, সালাম, আজিজ, বুলু, হিরো, কিরণ, এজাজ ও ইয়াসিরসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে জানান, মাত্র দুই দিন আগেই সামান্য চাপ পড়তেই রাস্তা থেকে পিচ উঠে গেছে। তাঁদের ভাষায়, “এমন কার্পেটিং হলে একে রাস্তা বলা যায় না। ছোট বাচ্চা আর মুরগিই যদি পিচ তুলে ফেলে, তাহলে ট্রাক্টর বা ভারী যান চললে কী হবে?”

সব মিলিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও সাইট তদারককারীদের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে কোটি টাকার প্রকল্প প্রকাশ্যেই নিম্নমানের কাজে পরিণত হচ্ছে। অনিয়ম আড়াল করতে কোথাও কোথাও রাস্তার ওপর নতুন করে পিচ ছিটিয়ে তার ওপর বালু ফেলার চিত্রও দেখা গেছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার সুনীল প্রথমে কিছু কাজ নিম্নমানের হয়েছে বলে স্বীকার করলেও পরে তা অস্বীকার করেন। পিচ উঠে যাওয়ার দৃশ্য দেখানো হলে তিনি বলেন, “৩–৪ দিন সময় না দিলে পিচ উঠবেই।”

অন্যদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস রুনা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম নিজের ৪০ বছরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে দাবি করেন, কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তবে বাস্তব চিত্র নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। একপর্যায়ে তিনি স্পিড ব্রেকারের প্রসঙ্গ টেনে কথার মোড় ঘুরিয়ে দেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি ইঙ্গিত দেন, সংবাদ প্রকাশ করেও কোনো লাভ নেই, কারণ কাজটি মন্ত্রণালয় পর্যায় থেকে অনুমোদিত। তাঁর এমন মন্তব্যে উপস্থিত স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

মাঠপর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তিনি শুরুতে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কথা স্বীকার করলেও অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ার পর কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এরপর থেকে তিনি কার্যত কাজের তদারকিতে অনীহা দেখাচ্ছেন। এলাকাবাসীর দাবি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর ঘনিষ্ঠ সমন্বয় এবং নমনীয় অবস্থানের সুযোগেই নিম্নমানের কাজ চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল আল মামুন কাওসার শেখ বলেন, “আমি একাধিকবার কাজ পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি—কাজ খারাপ হলে বিল দেওয়া হবে না। পৌরসভার প্রকৌশলীকে তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও কেন চলমান কাজেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



আরও পড়ুন:

banner close
banner close