বৃহস্পতিবার

২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০ পৌষ, ১৪৩২

ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত, রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড

ফয়সাল আহমেদ, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৯:১৩

শেয়ার

ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীত, রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড
ছবি: বাংলা এডিশন

গত কয়েক দিনে পৌষের সকালগুলো হিম হয়ে উঠেছে। উত্তপ্ত রক্তিম সূর্যটিও ইদানীং নিস্তেজ। গাছপালা, ফুল-ফল, সবুজ ঘাস ও ফসলের মাঠ যেন শিশিরসিক্ত। আবার কাকডাকা ভোর ও সন্ধ্যা নামার পরপরই প্রকৃতিকে গ্রাস করছে কুয়াশার চাদর। চলতি মৌসুমে আজ রেকর্ড হয়েছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সব মিলিয়ে ব্যস্ত নগরীর সোরগোল ম্লান হয়ে শীতে শান্ত-স্তব্ধ হয়ে গেছে রাজশাহীর চারপাশ।

এদিকে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. রহিদুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে আবহাওয়ার ধারাবাহিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল থেকেই তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। আজ সকাল থেকে রাজশাহীতে ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। সাধারণত প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষভাগে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। জানুয়ারির প্রথমার্ধে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামে। জানুয়ারির শেষভাগে গিয়ে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আজ সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষকের ভাষ্য, সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ দিকেই শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। চলতি মাসের শেষ দিকে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাস রয়েছে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত নদীতীরবর্তী এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। এ ছাড়া রাত ও দিনের তাপমাত্রা পর্যায়ক্রমে কমতে থাকবে।

নগরজুড়ে লক্ষ্য করা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে খুব সকাল ও সন্ধ্যা হলেই গরম কাপড় ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। শীতের আগমনে ওম পেতে প্রতিটি বাড়ির আলমারি ও কাপড়ের ট্রাঙ্ক থেকে বের হয়েছে নকশি কাঁথা, হালকা কম্বল ও লেপ। নগরীর বাজারগুলোতেও শীতের আগমনীতে উঠেছে গরম পোশাকের নতুন সমাহার।

শীতের আগমনে গাছে গাছে গাছিরাও খেজুরের রস আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে গুড়। আর সেই গুড় দিয়ে গ্রামগঞ্জে বানানো হচ্ছে নানা রকমের শীতের পিঠা। যদিও শহুরে জীবনে এর ব্যত্যয় ঘটেনি। রাজশাহীর বিভিন্ন মোড়ে ভ্যান ও দু’চাকার গাড়িতে ভাপা পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে। হালকা শীতে সেদ্ধ চাল, খেজুরের গুড় ও নারিকেলের সমন্বয়ে তৈরি গরম গরম পিঠার স্বাদই আলাদা। এই শীতে ভাপা পিঠার পাশাপাশি বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের প্রিয় খাবার কালাই রুটির চাহিদাও বেড়েছে। শীত এলেই নগরীর কেন্দ্রীয় বাস ও রেলস্টেশন এলাকা, সাহেব বাজার, কোর্ট হড়গ্রাম, তালাইমারী, ভদ্রা, উপশহরসহ বিভিন্ন স্থানে কালাইরুটি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। কালাইরুটির সঙ্গে বেগুন ভর্তা, হাঁস বা গরুর মাংস কিংবা গরুর বটভুনা এবং ধনেপাতার ঝাল চাটনির চাহিদা বেড়ে যায়।

শীতের আগমনে জনজীবন ধীরে ধীরে স্থবির হতে থাকলেও চাঞ্চল্য আসে ধুনকারদের মাঝে। এ সময় ব্যস্ততার মধ্যেই কাটে তাদের দিন। তবে অন্যান্য স্বাভাবিক বছরের তুলনায় এবার ব্যস্ততা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। লেপ, তোশক, জাজিম ও বালিশ তৈরিতে রীতিমতো ব্যস্ত রাজশাহীর ধুনকাররা।

ডিসেম্বরের যুথুবুথু শীতে নগরীর রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা থাকে। এতে খেটে খাওয়া রিকশাচালক ও দিনমজুরেরা পড়েন বিপাকে। স্বাভাবিক দিনের মতো এ সময় রিকশাচালকেরা যাত্রী পান না, ফলে পর্যাপ্ত আয়ও হয় না। নগরীর শিরোইল মোল্লামিল এলাকার রিকশাচালক মিনু মিঞা প্রতিদিন সকাল-বিকাল রিকশা নিয়ে ছোটাছুটি করেন। তিনি প্রতিবেদককে জানান, গতকাল থেকে হঠাৎ বাতাসের সঙ্গে প্রচণ্ড শীত বইতে শুরু করেছে। মানুষ খুব জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। রাস্তাঘাটে মানুষ না থাকলে ভাড়াও মেলে না। স্বাভাবিক দিনে কম করে হলেও ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা আয় করা যায়, কিন্তু ডিসেম্বরের শীতে ৫০০ টাকা রোজগার করাই দায় হয়ে দাঁড়ায়।



banner close
banner close