চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বৈলগাঁও চা বাগানে ২০২৬ সালের জন্য সাড়ে ৪ লাখ কেজি চা পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার ৪৭২ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই চা বাগানটির রয়েছে শতবর্ষী ইতিহাস। নির্ভরযোগ্য নথি না থাকলেও লোকমুখে জানা যায়, ১৯১২ সালে ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা এ বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় বাগানের ম্যানেজার ছিলেন মি. হিগিন। বাংলাদেশ চা বোর্ড ১৯৯২ সালে চুক্তির মাধ্যমে চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগানের ব্যবস্থাপনা বাঁশখালী টি কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে ব্র্যাক কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে এটি ‘ব্র্যাক বাঁশখালী টি কোম্পানি লিমিটেড’ নামে পরিচালিত হয় এবং ২০০৪ সালে চা কারখানা চালু করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর ব্র্যাকের কাছ থেকে সিটি গ্রুপ পরিচালিত ভ্যান ওমেরান ট্যাংক টার্মিনাল (বাংলাদেশ) লিমিটেড এবং ইন্টারন্যাশনাল অয়েল মিলস্ লিমিটেড চা বাগানটির মালিকানা ক্রয় করে।
ক্লোন চা উৎপাদনের কারণে বৈলগাঁও চা বাগান বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষ মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান হিসেবে পরিচিত। খৈয়াছড়া, ক্লিফটন ও কর্ণফুলী চা বাগানের পর মানের দিক থেকে এর অবস্থান উল্লেখযোগ্য। এখানকার উৎপাদিত চায়ে যেমন পুষ্টিগুণ রয়েছে, তেমনি দেশজুড়ে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন এই চা বাগানটি বাঁশখালীর অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবেও পরিচিত। ২০১৬ সালে মো. আবুল বাশার ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে চা উৎপাদন ও আবাদী জমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বাগানটিতে ম্যানেজার, সহকারী ম্যানেজার, বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।
বাংলাদেশের ১৬২টি চা বাগানের মধ্যে গুণগতমান বিবেচনায় ২০২৫ সালে বৈলগাঁও চা বাগান জাতীয় পর্যায়ে ১৫তম এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৩য় স্থানে অবস্থান করে। বর্তমানে বাগানের সাড়ে ৭০০ একর জমি আবাদাধীন, যার প্রায় ৯০ শতাংশ ক্লোন চা। চা উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। উপযোগী বৃষ্টিপাতের ভিত্তিতেই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০০২ সালে ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা বাগানটি ২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো ৪ লাখ কেজি চা পাতা উৎপাদনের রেকর্ড গড়ে। শীত মৌসুমে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বর্তমানে কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। চা বাগানের ভেতরে শ্রমিকদের জন্য রেশন, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। আধুনিক পদ্ধতিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও রয়েছে।
তবে বাঁশখালী প্রধান সড়কের পুকুরিয়া চাঁদপুর বাজার থেকে চা বাগান পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কের একাংশের পিচঢালাই কাজ শেষ হলেও বাকিটুকু অদৃশ্য কারণে বন্ধ রয়েছে। সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় পর্যটক, শ্রমিক ও কর্মচারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। দ্রুত সড়কটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
চা বাগানের ম্যানেজার মো. আবুল বাশার বলেন, '২০২৫ সালে ৪ লাখ কেজি চা পাতা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। নতুন বছর ২০২৬ সালে সাড়ে ৪ লাখ কেজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।'
আরও পড়ুন:








