মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতার ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় রাজনৈতিকমহলসহ বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান লিংকন ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাইসুল ইসলাম বাকের (৩৫) রাতে একটি টিনে ঘরে মাদক সেবন করছেন।
ভিতিওতে মাদক সেবনকারী স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাইসুল ইসলাম বাকের উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের বহলাতলী গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন খাঁনের ছেলে ও ছাত্রদল নেতা লুৎফর রহমান লিংকন একই উপজেলার চালা ইউনিয়নের সট্টি গ্রামের সুজা উদ্দিনের ছেলে।
গত ১৫ ডিসেম্বর ভিডিওটি "জিয়ার সৈনিক হরিরামপুর থানা" নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা হয়। ভিডিওটি আপলোড করার পরপরই ভাইরাল হয়ে যায়। এতে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীেপেশার মানুষের নজরে চলে আসে মাদক সেবনকারী এই দুই নেতার কর্মকাণ্ড। এতে করে বিষয়টি রাজনৈতিক মহলসহ সুশীল সমাজের ব্যাপক সমালোচিত হয়। তবে ১৮ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুর থেকে ওই ভিডিওটি পেজ থেকে ডিলিট করা হয়। তবে এই পেজটি কে বা কারা ব্যবহার করে তা এখনও জানা যায়নি। স্থানীয় অনেকেই ওই মাদকসেবনের ওই ভিডিও ডাউনলোড করে বিভিন্ন জনের মোবাইলেও আদান প্রদান চলছে বলেও জানা গেছে।
মাদক সেবনকারী এই দুই নেতা উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রসুল শাহীন মৃধার অনুসারী বলেও অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিব্রতকর অবস্থায় পরেছেন বলেও উপজেলার দলীয় একাধিক নেতাকর্মীরা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের মধ্যেও অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তারা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদকসেবন করে আসছে। এতে করে দিনে দিনে এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। তাই এলাকার যুব সমাজকে মাদকের কড়ালগ্রাস থেকে রক্ষা করতে হলে এদেরকে রাজনৈতিক দল থেকে বয়কটসহ এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
ভাইরাল এই মাদক সেবনের ভিডিওটির বিষয়ে বহলাতুলী গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম শিকদার জানান, "বাকের ও লিংকন উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রসুল শাহীন মৃধার অনুসারী। তার সাথে চলাফেরা করেই দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্রটি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে মাদক সেবন করে আসছে। আর এদের অর্থনৈতিক যোগান দেয় শাহীন মৃধা। কিছু দিন আগে এর প্রতিবাদ করায় এই গ্রুপটি আমার ওপরেও হামলা চালায়। শাহীনের বাবা ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। শাহীন মৃধা বেশ কয়েক বছর ধরে সিঙ্গাপুরে ছিলেন। কয়েক মাস আগে দেশে ফিরে এলাকায় এসে এই মাদকসেবিদের নিয়ে দলীয় কার্যক্রম করে আসছে। তাদের মাদক সেবনের টাকার যোগানই দেয় এই শাহীন মৃধা। এদের কারণে এলাকার যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই অচিরেই এদের দল থেকে বহিষ্কার করে দলীয় সকল কার্যক্রম থেকে এদের বাদ দেয়া উচিত। তা না হলে দলীয় ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এই মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা উচিত।"
মাদক সেবনের বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা লুৎফর রহমান লিংকন জানান, রাজনৈতিক কারণে উদ্দেশ্য প্রনোদীত হয়ে এআই সফটওয়ার মাধ্যমে এডিট করে ভিডিওটি বানানো হয়েছে। আমি এ ধরনের কার্যকলাপে জড়িত নই। মূলত আমি সামনে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী। তাই আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই আমাকে দলীয়ভাবে হেয় করতে সংঘবদ্ধ একটি চক্র এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। মূলত গ্রুপিং রাজনীতির কারণেই আমার ইমেজ নষ্ট করতেই ফেক আইডি থেকে এগুলো অপপ্রচার করা হচ্ছে। আমি এই অপপ্রচারের তীব্র নিন্দাসহ প্রতিবাদ জানাই।
তবে ভাইরাল ভিডিওটির বিষয়ে আরেক অভিযুক্ত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাইসুল ইসলাম বাকেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রসূল শাহীন মৃধা জানান, ভিডিওটি আমি দেখেছি। কিন্তু ওরা আমার সামনে সিগারেটও খাওয়ার সাহস পাই না। এখন কোথায় কি করল এটা ওদের ব্যক্তিগত বিষয়। এর দায়ভার তো আর আমি নিতে পারি না। আমার সাথে ওরা থাকে ঠিক আছে। কিন্তু ওদের মতো আরও অনেকেই তো আমার সাথে থাকে। আমি বিষয়টি জানার পর ওদের বলে দিয়েছি আমার কাছে আর না আসতে। তাছাড়া ওরা তো আর আমার সংগঠন করে না। একজন করে ছাত্রদল, আরেকজন করে স্বেচ্ছাসেবক দল। আমি করি মূলদল। তাই এর দায়ভার তো আর আমি নিতে পারি না।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. আব্দুল খালেক শুভ জানান, তাদের মাদকাসক্তের ভিডিও’র বিষয়ে অবগত নই। তবে কোনো ব্যক্তিগত ঘটনার দায় বিএনপি নেবে না। বর্তমানে হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত রয়েছে। তাই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে মাদকাসক্ত কোনো ব্যক্তিরই ছাত্রদলে থাকার সুযোগ নেই।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এড. জি এস জিন্নাহ খান মুঠোফোনে জানান, ভিডিওটি আমার সামনে আসে নাই। আমি দেখিনি। এ বিষয়ে এখনও কেউ আমাকে লিখিতভাবে কিছু জানায়নি। আমি শুনছি, তবে ভিডিওটি আমার চোখে পড়েনি। পড়লে আমি কেন্দ্রে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
আরও পড়ুন:








