জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে সুজন মণ্ডল নামে এক যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাশিরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ওই ওয়ার্ডের পাকুরদাড়িয়া গ্রামে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সুজন মণ্ডল বুধবার বিকেলে পাকুরদাড়িয়া গ্রামে তাঁর খালাতো বোন সোনাভানের বাড়িতে গিয়ে দরজা ভেঙে ৭০ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে আসেন। পরে সন্ধ্যার দিকে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের সহায়তায় সুজন মণ্ডলকে পাকুরদাড়িয়া গ্রামে ধরে আনা হয়। সেখানে বেধড়ক মারপিটের একপর্যায়ে সুজন মণ্ডল টাকা চুরির কথা স্বীকার করেন। তিনি চুরি যাওয়া টাকার মধ্যে ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দেন।
এরপর ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন সেখান থেকে সুজন মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে কাশিরা বাজারে তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা আবারও সুজন মণ্ডলকে বেধড়ক মারপিট করেন। এতে সুজন মণ্ডল গুরুতর আহত হন। ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন থানায় খবর দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন। পুলিশ রাতের বেলায় ঘটনাস্থলে যায়নি। তখন ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন দুইজন গ্রাম পুলিশ দিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সুজন মণ্ডলকে আটকে রাখেন।
এরপর পাহারার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশরা সুজন মণ্ডলের আত্মহত্যার খবর দেন। তখন সুজন মণ্ডলের স্বজন ও উৎসুক লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাঁরা এসে দেখেন, ফ্যানের হুকের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় সুজন মণ্ডলের লাশ ঝুলে আছে। সকাল এগারোটায় পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
সুজনের স্ত্রী মারুফা আক্তার অভিযোগ করেছেন, ইউপি সদস্য ও তাঁর সহযোগীরা রাতভর সুজনকে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। পরে ঘটনাটি আড়াল করতে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুজন টাকা চুরি করেছিল এবং তাঁরা তাঁকে কার্যালয়ে এনে রাতের পাহারায় রেখেছিলেন। তাঁর দাবি, রাতের কোনো একসময় সুজন আত্মহত্যা করেছে।
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, কার্যালয়ে কাউকে আটকে রাখার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এবং কোনো ইউপি সদস্যের এমন অধিকার নেই।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, সুজনের মাথায় ব্যান্ডেজ ও পিঠে কালশিটের দাগ রয়েছে। তাঁর শরীরে মারধরের চিহ্নও পাওয়া গেছে। সুজনের স্ত্রী মারুফা আক্তার হত্যার অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন:








