সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় আহত হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী শান্তিরক্ষী সদস্য চুমকি আক্তার। তিনি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পেচারকান্দা গ্রামের বাসিন্দা।
পারিবারিক সূত্র জানায়, চুমকি আক্তার গত ৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যোগ দেন। মিশনে যাওয়ার মাত্র ৪২ দিনের মাথায় শনিবার বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন ও গ্রেনেড হামলায় তিনি আহত হন। হামলায় গ্রেনেডের একাধিক স্প্রিন্ট তার ডান হাত ও ডান পায়ে বিদ্ধ হয়।
আহত অবস্থায় তাকে হেলিকপ্টারে করে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে একটি উন্নত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রবিবার বিকেলে চুমকি আক্তারের স্বামী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য মো. ইকরামুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “হামলায় তার ডান হাত ও পায়ে স্প্রিন্ট লেগেছে। আল্লাহর রহমতে তিনি শঙ্কামুক্ত আছেন এবং চিকিৎসা চলছে।”
চুমকি আক্তারের পরিবার জানায়, তাদের ইব্রাহিম আরাবী নামে দুই বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার সময় ছেলেকে শাশুড়ির কাছে রেখে যান তিনি। চুমকি আক্তার ঘিওর উপজেলার পেচারকান্দা গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ ও জহুরা বেগমের মেয়ে।
চুমকির মা জহুরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার চার মেয়ের মধ্যে চুমকি সবার ছোট। ওর ডান হাত আর পায়ে আঘাত লেগেছে শুনে বুক ফেটে যাচ্ছে। ওর ছোট ছেলেটা আমার কাছেই আছে। আমার স্বামী কৃষি কাজ করে, আমাদের কোনো ছেলে নেই।”
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সুদানের আবেই এলাকায় ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত এবং আটজন আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন— কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), সৈনিক শামীম রেজা (রাজবাড়ী), সৈনিক শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) ও লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন— লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা), সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), মোসা. উম্মে হানি আক্তার (রংপুর), চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) এবং মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী)।
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই হতাহত হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আরও পড়ুন:








