রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

বালুঘাটের ভাগ নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের মহড়া, এলাকায় আতঙ্ক

কুষ্টিয়া, প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৯:১৩

শেয়ার

বালুঘাটের ভাগ নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের মহড়া, এলাকায় আতঙ্ক
ছবি: বাংলা এডিশন

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলাধীন এলংগি আচার্য মৌজায় গড়াই নদীর ড্রেজিংকৃত বালু অপসারণের ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই নেতাকে মারধরের পর লাঠিসোটা ও ঢাল নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের নিদেনবাজার এলাকায় মারধরের ঘটনা ঘটে।

এরপর আধিপত্য বিস্তারে সকাল ১১টার দিকে তিন গ্রুপে বিভক্ত নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিদেনবাজার থেকে লাঠিসোটা ও ঢাল নিয়ে মহড়া বের করেন। মহড়াটি লালনবাজার পৌছালে পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়াও এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বালু তোলা বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

এদিকে, বালুঘাট নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর ও মহড়ার ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী। জানমালের ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কায় দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদে চলে যান লালনবাজারের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ীরা।

মারধরের শিকার নেতারা হলেন - যদুবয়রা ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক মানিয়ার মোল্লা ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহাবুবুল হাসান রনি।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে এলংগি আচার্য মৌজায় গড়াই নদীর ড্রেজিংকৃত প্রায় ৭০ হাজার হাজার ঘনফুট বালু প্রায় ৭০ লাখ টাকায় ইজারা দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ( পাউবো)। টেন্ডারের মাধ্যমে বালু অপসারণের দায়িত্ব পাই কুষ্টিয়ার সৈকত এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু বালু অপসারণের যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল না থাকায় ঠিকাদার বালু তুলতে পারেনা। সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে শেয়ার নিয়ে বালু তুলছেন যদুবয়রা ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক মানিয়ার মোল্লা, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহাবুবুল হাসান রনি, বিএনপি নেতা শামছুল আলম ও রিপন হোসেন। তারা বালুঘাট এলাকার বাসিন্দা।

আরও জানা গেছে, বালুঘাটের শেয়ার ও টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তিন গ্রুপে বিভক্ত ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মানিয়ার, রনি, শামছুল ও রিপনদের উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই মধ্যে শনিবার সকালে মানিয়ার ও রনি নিদেনবাজারে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের মারধর করে অপদস্থ করে। এরপর যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল জলিল, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রিপন আলী ও বিএনপি নেতা ফারুক, সেলিম ও হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে লাঠিসোটা ও ঢাল নিয়ে মহড়া বের করেন শতাধিক নেতাকর্মী। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বালু তোলা বন্ধ করে দেয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার ও এমপি পদপ্রার্থী নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে তিনভাবে বিভক্ত কুমারখালীর বিএনপি। একপক্ষের নেতৃত্ব দেন কুষ্টিয়া ৪ আসনের সাবেক এমপি ও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। অপর দুই গ্রুপের নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শেখ সাদী ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিক। তারাও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। সভা, সমাবেশ, মিছিল ও দলীয় কার্যক্রম তিন গ্রুপের নেতাকর্মীরা ভিন্নভাবে পালন করলেও বালুঘাট নিয়ে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

সকাল ১১টার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লালনবাজার এলাকায় শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী মহড়া ও শ্লোগান দিচ্ছেন। তাদের কারো হাতে বাঁশ ও কাঠের লাঠি। আবার কারো হাতে বেতের তৈরি ঢাল। বাজারের সবকটি দোকানঘর বন্ধ। এরপর সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে পুলিশ এসে বালু তোলা বন্ধ ঘোষণা করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

এ সময় নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক দোকানদার বলেন, বালুঘাট নিয়ে প্রায়ই বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় জড়াচ্ছেন। আজ সকালে দুইজনকে মারধরের পর অস্ত্র মহড়া দিচ্ছেন। ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদে আছি।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে যদুবয়রা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল জলিল অভিযোগ, বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। এতে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। সেজন্য তারা বালু তোলা বন্ধ করতে আন্দোলন করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, বিভিন্ন কারণে দলের মধ্যে বিভেদ আছে। তবে জনগণের স্বার্থে বালুঘাট বন্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। দ্রুতই ঘাট বন্ধে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।

এ সময় যদুবয়রা ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক মানিয়ার মোল্লা বলেন, আমার বৈধ ঘাট। কিন্তু চাঁদা নেওয়ার জন্য তিন গ্রুপের বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বিনা টাকায় ৫০ ভাগ শেয়ার দাবি করছেন তারা। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় সকালে আমাকে ও চাচাতো ভাই রনিকে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করেছে। এখন আবার অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। থানায় মামলা করব।

সৈকত এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক তরুন হোসেন বলেন, ইজারা, ভ্যাট, ট্যাক্স সহ প্রায় এক কোটি টাকা দিয়ে পাউবোর কাছ থেকে ঘাট নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার ভাগাভাগি করে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ গাড়ি বালু তোলা হচ্ছে। তবে ভাগ না পেয়ে বিএনপির অন্য গ্রুপ বাধা সৃষ্টি করছে। বিষয়টি লিখিতভাবে প্রশাসনকে জানানো হবে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন ফোনে বলেন, বালুঘাট নিয়ে দুইপক্ষের মারামারি ও উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে ঘাট বন্ধ করেছে। ঘাটের কাগজপত্রাদি যাচাই বাছাই করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আখতার বলেন, বালুর ঘাট বৈধ। পাউবো ইজারা দিয়েছেন। তবুও বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।



banner close
banner close