শনিবার

১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

তদন্তের নামে দুই নারীকে অনৈতিক প্রস্তাব এসআইয়ের বিরুদ্ধে

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৫:০৩

আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৫:০৪

শেয়ার

তদন্তের নামে দুই নারীকে অনৈতিক প্রস্তাব এসআইয়ের বিরুদ্ধে
ছবি: এসআই মোস্তাফিজুর রহমান

তদন্ত ও ডিএনএ টেস্টের নামে হয়রানি, অনৈতিক প্রস্তাব এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মামলা প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার সদর থানায় কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে।

পৃথক দুটি ঘটনায় দুই নারী ভুক্তভোগী অভিযোগ এনে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও বগুড়া পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

অভিযোগে এক ভুক্তভোগী নারী জানান, তিনি বগুড়া সদর উপজেলার মালগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট তিনি বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও থানা পর্যায়ে তা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে।

তিনি আরও জানান, মামলার অগ্রগতি জানতে থানায় গেলে তাকে হতাশাজনক ও অবমাননাকর মন্তব্যের মুখে পড়তে হয়। একপর্যায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোস্তাফিজুর রহমান তাকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। সে সময় তিনি ঢাকায় পরীক্ষায় ব্যস্ত থাকায় দেখা করতে না পারলে ওই কর্মকর্তা ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে আগের পরীক্ষার ফল গ্রহণযোগ্য হবে না বলে দাবি করেন। এ সময় তিনি অনৈতিক প্রস্তাব দেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারী। বিষয়টি তিনি মোবাইল ফোনে অডিও রেকর্ড করে সংরক্ষণ করেছেন বলে জানান।

অপর একটি অভিযোগে আরেক ভুক্তভোগী নারী জানান, তিনি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মোস্তাফিজুর রহমান সানী নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিক হয়রানির শিকার হন। একপর্যায়ে তাকে অপহরণ ও ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, বিষয়টি বগুড়া সদর থানায় জানালে তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মোস্তাফিজুর রহমান। তবে তদন্তের নামে ওই কর্মকর্তা তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। এতে রাজি না হওয়ায় তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে উল্টো ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধেই একটি জিডি করান এবং তা আদালতে প্রসিকিউশনের জন্য পাঠান।

দুই ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট এসআই আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে মামলার গতিপথ পরিবর্তন করেছেন এবং অভিযুক্তদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এতে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও মানসিক চাপে রয়েছেন।

এ ঘটনায় এসআই মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত, বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও বগুড়া পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এসআই মোস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। তবে এরপরও আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহাদাত হোসেন জানান, অভিযুক্ত এসআই মোস্তাফিজুর রহমানকে দুই দিন আগেই বগুড়া সদর থানা থেকে বদলি করা হয়েছে।



banner close
banner close