শনিবার

১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

কেরানীগঞ্জ অগ্নিকাণ্ড: ‘আকস্মিক দুর্ঘটনা’ নয়, প্রশাসনিক অবহেলা

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৪:৫৩

শেয়ার

কেরানীগঞ্জ অগ্নিকাণ্ড: ‘আকস্মিক দুর্ঘটনা’ নয়, প্রশাসনিক অবহেলা
ছবি: বাংলা এডিশন

ঢাকার কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকায় জাবালে নূর টাওয়ারে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কোনো ‘আকস্মিক দুর্ঘটনা’ নয়; বরং এটি প্রশাসনিক অবহেলা, নিয়মিত তদারকির ব্যর্থতা এবং দীর্ঘদিনের অনিয়মের পরিণতি—এমন অভিযোগ এখন জোরালো হয়ে উঠছে।

মার্কেট কাম আবাসিক ভবনটির বেজমেন্টে প্রকাশ্যে দাহ্য জুট ও পোশাকের গোডাউন পরিচালিত হলেও আগুন লাগার আগ পর্যন্ত কোনো সংস্থার কার্যকর নজরদারি চোখে পড়েনি। অথচ গ্যারেজের জায়গায় গোডাউন স্থাপন, বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন এবং অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ঘাটতির বিষয়টি স্থানীয়দের কাছে ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোর আনুমানিক পাঁচটার দিকে ভবনটিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (দুপুর দুইটা) আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন লাগার পর হঠাৎ করেই প্রশাসনের তৎপরতা দৃশ্যমান হয়—ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট, সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন এবং তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা আসে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, দুর্ঘটনার আগে এই প্রশাসনের তৎপরতা কোথায় ছিল?

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনের ভেতরে বহু মানুষ আটকা পড়েন। সৌভাগ্যক্রমে অন্তত ৪৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পরিস্থিতি যে কোনো মুহূর্তে ভয়াবহ গণদুর্ঘটনায় রূপ নিতে পারত। ঘন ধোঁয়া ও বিপুল দাহ্য সামগ্রীর কারণে উদ্ধারকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন।

ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন স্বীকার করেছে, ভবনটিতে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। তবে সচেতন মহলের প্রশ্ন—এই অনিয়ম কি একদিনে হয়েছে? নাকি দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নীরব সম্মতি ও চোখ বন্ধ রাখার ফলেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়েছে?

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগেও একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাই শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে জীবনঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিবার দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন ও দায়সারা বক্তব্য দিয়ে পার পাওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ না হলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ভবিষ্যতেও ঘটতেই থাকবে। প্রয়োজন নিয়মিত পরিদর্শন, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

এই অগ্নিকাণ্ডে সম্ভাব্য কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতায়। এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনাও কি আগেরগুলোর মতো সময়ের সঙ্গে চাপা পড়ে যাবে, নাকি সত্যিই দায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



banner close
banner close