খুলনার রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসের (ইউএনও) সার্টিফিকেট সহকারী শেখ আহম্মদ আলীকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অভিযোগ ঘুরছে স্থানীয় মহলে। একই উপজেলায় টানা প্রায় ১৪ বছর ধরে কর্মরত এই কর্মকর্তা রাজনৈতিক প্রভাব, অবৈধ সুবিধা আদায়, আর্থিক লোভ এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অফিসকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে সাধারণ সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে। তবে তার প্রভাব ও সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।
সম্প্রতি তার একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ায় রূপসা থেকে শুরু করে পুরো জেলায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ওই রেকর্ডে তাকে বলতে শোনা যায়, “আমি শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলকে পড়াইছি। পুতুলের সঙ্গে আমার কথা হয়, হাসিনার সঙ্গেও কথা হয়। আমারে বদলি করবে এমন কেউ আছে? কেউ নাই”। এই বক্তব্য প্রকাশের পর বিষয়টি আরও তীব্র আলোচনার জন্ম দেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্ত আহম্মদ আলী ২০১১ সালে নিজ উপজেলা রূপসায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ২ মাস পাইকগাছা ভূমি অফিসে, ২০১৬ সালে ৬ মাস তেরখাদা ভূমি অফিস এবং ২০২২ সালে ১ বছর ফুলতলা ইউএনও অফিসে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে আবার রূপসা ইউএনও অফিসে যোগদান করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ও প্রভাবশালী আমলাদের সহায়তায় তিনি বারবার নিজ উপজেলায় ফিরতে সক্ষম হন।
বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি, জেলা প্রশাসক ও উঁচু পর্যায়ের আমলাদের নাম ভাঙিয়ে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের ফাইল আটকে কমিশন নিতেন, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ ছাড়া উপজেলা ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে সন্ত্রাসী কর্মীদের মাধ্যমে সুবিধা পাইয়ে দিয়ে সেখান থেকেও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, নিজের প্রভাব খাটিয়ে তিনি পুরো ইউএনও অফিসকে ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি’ হিসেবে পরিচালনা করতেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করেছে, ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে বিভিন্ন সময় সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে তিনি এলাকায় মূল্যবান জমি ও বাড়ি কিনেছেন। তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ অর্ধশত কোটি টাকারও বেশি বলে স্থানীয়রা মন্তব্য করেন। যদিও এসব অভিযোগের কোনো সরকারি তদন্ত এখনো হয়নি।
২০২০ সালে সরকারি কর্মচারীর স্ত্রীর নামে ভিপি লিজ নিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় মামলার নির্দেশনা আসে। তবে অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী আমলাদের মাধ্যমে তিনি সেসব অভিযোগ ‘নিরবে নিস্তব্ধ’ করে ফেলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহম্মদ আলী মোবাইলে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত কল রেকর্ডের বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাই এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা রিক্তা জানান, তার বিষয়ে আমি অবগত আছি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে ঘেরা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং অবৈধ সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও একাধিক ভুক্তভোগী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ, একজন পেশকার কীভাবে এত প্রভাবশালী হন, কীভাবে এত সম্পদের মালিক হন? তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:








