মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০ পৌষ, ১৪৩২

সরাইলের সাবেক ইউএনও মোশারফের সীমাহীন দুর্নীতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩:৩৭

শেয়ার

সরাইলের সাবেক ইউএনও মোশারফের সীমাহীন দুর্নীতি
ইউএনও মো. মোশারফ হোসাইন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সদ্য বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসাইনের সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে ইউএনওর বদলির পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের কাগজপত্র পোস্ট করে ক্ষোভ প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে দায়িত্ব পালনের এক বছরের সময়জুড়ে সরকারি বরাদ্দ লুটেপুটে খেয়েছেন ইউএনও মোশারফ হোসাইন।

গেলো ২৩ নভেম্বর দুদক চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত মো. মোশারফ হোসাইন (৩৬তম বিসিএস ক্যাডার) সরাইল উপজেলায় যোগদান করেন গত বছরের ১৪ নভেম্বর। যোগদানের পরবর্তী সময়ে ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরে এডিবি কর্মসূচির ইউনিয়ন পরিষদ সহায়তা খাতে বরাদ্দ ১ম কিস্তির ৭৫ লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ টাকার আংশিক এবং ২য় কিস্তির থোক বরাদ্দ ৭৫ লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ টাকা—মোট ১ কোটি ৫০ লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা কাজের জন্য প্রদান করা হলেও গোঁজামিল দিয়ে অন্যান্য খাত থেকে প্রকল্প সমন্বয় করা হয়েছে এবং বাকি টাকা উত্তোলনে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এছাড়াও ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) নগদ অর্থের ১ম ও ২য় পর্যায়ের ইউনিয়নওয়ারী এবং ২০% উপজেলা পরিষদ রিজার্ভভুক্ত ৮১টি প্রকল্পে মোট ১,৩৪,৬০,৯৯৯.৮৮ টাকা এবং ৩য় পর্যায়ের ২৯টি প্রকল্পে ৭৩,৬৪,৫১১.১৮ টাকা—সর্বমোট ২,০৮,২৫,৫১১.০৬ টাকার প্রকল্পে ‘কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পে ৯৯% অনিয়ম—৫০–৫০ ভাগ হয়েছে, যার কারণে কোনো কাজই হয়নি। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের ১ম পর্যায়ে টিআর নগদ অর্থের ইউনিয়নওয়ারী ৮৪টি প্রকল্পে ১,৩৮,১০,৪২৭.২৪ টাকা এবং ২য় পর্যায়ের ৬৮টি প্রকল্পে মোট ১,৬৭,১৯,৪২৫.১৭ টাকা—সর্বমোট ৩,০৬,০৯,৮৫২.৪১ টাকা প্রকল্প বরাদ্দ বিভিন্ন নামে প্রদান করা হলেও কাজের অস্তিত্ব বা হদিস নেই, কোনো তদারকি নেই।

অনেক প্রকল্পের দরপত্র/টেন্ডার না দিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছেন বা ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। এরমধ্যে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের কোনো টেন্ডার না দিয়ে ৮ লাখ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনে রাতারাতি পানি ফোয়ারার নামে আগের প্রকল্পের ইট তুলে জোড়াতালি দিয়ে কাজ শেষ করে ১০ লাখ টাকা তছরূপ করেছেন। সম্প্রতি উপজেলার খাদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে—পরে জেলা প্রশাসক বরাবর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি জানান, গত এক বছরে ইউএনও উপজেলায় রামরাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তার ঘুষ–দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে উপজেলাবাসী অতিষ্ঠ। সুষ্ঠু তদন্তক্রমে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে অভিযোগ করেছি। বদলি থাকায় অভিযুক্ত সাবেক ইউএনও মো. মোশারফ হোসাইনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ইউএনও মো. মোশারফ হোসাইনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৬ নভেম্বর সরাইল উপজেলা থেকে বদলি হয়ে ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় যোগদান করেছেন ইউএনও মোশারফ হোসাইন। তার বদলির পর থেকে একের পর এক দুর্নীতির তথ্য জনসম্মুখে আসায় তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।



আরও পড়ুন:

banner close
banner close