পাবনার ঈশ্বরদীতে বস্তায় ভরে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে ৮টি কুকুরছানাকে হত্যার ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেলে ব্যাপকভাবে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। গত রবিবার থেকে অদ্যাবধি আট'টি সন্তানহারা মা কুকুরটি দিশাহারা। রোমহর্ষক এ ঘটনার পর নতুন চারটি ছানা পেয়েছে সন্তানহারা সেই মা কুকুর। নতুন ছানা দত্তক পেয়েই আদর-যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছে সন্তানহারা কুকুরটি।
জানা গেছে, বুধবার (৩ ডিসেম্বর) মা কুকুরটিকে দেওয়া হয় নতুন দুটি কুকুরছানা। পরে বৃহস্পতিবারও দেওয়া হয় আরও নতুন দুটি কুকুরছানা। এলাকাবাসীরা বলেন, মা কুকুরটি নতুন ৪টি ছানাকে পেয়ে দুধ খাওয়াচ্ছে, আগলে রাখছে—ঠিক যেন আগের ৮টি সন্তানের মতোই মা কুকুরটি তাদের আপন করে নিয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ঈশ্বরদীয়ান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তা শাহরিয়ার অমিত নিয়ে আসে দুটি নবজাতক কুকুরছানা। সংগঠনের কর্মকর্তারা কুকুরটির বুকের দুধ বের করে নতুন দুটি ছানার শরীরে দুধ মাখিয়ে দেয়। মুহূর্তেই কুকুরছানার গন্ধ শুঁকে মা কুকুরটি তাদের কাছে টেনে নেয়।
এদিকে, সন্তানহারা মা কুকুরটির বেদনা ভোলাতে শাহরিয়ার অমিত আবারও নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামানের নির্দেশে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) আরও দুটি কুকুরছানা নিয়ে এসেছে। এই নতুন দুটি ছানা ঈশ্বরদীয়ান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খোঁজ পান। একই কায়দায় টমের দুধ ছানা দুটোর শরীরে মাখিয়ে দেয়ায় মা কুকুরটি গন্ধ শুঁকে তাদের ও আপন করে নেয়। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান, সহকারী কমিশনার ভূমি আসাদুজ্জামান সরকার ও কর্মচারীরা নতুন কুকুর ছানা চারটিকে মা কুকুরের দুধ খাওয়ানোর দৃশ্য দেখে হতবাক হয়।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদীয়ান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখপাত্র শাহরিয়ার অমিত বলেন, আমি টমের জন্য আনন্দঘন মুহূর্তের একটি সাক্ষী হতে যাচ্ছি। টমের ৮টি বাচ্চাকে বস্তাবন্দি করে মেরে ফেলানোর পর টম মানসিক এবং শারীরিকভাবে একেবারে ভেঙে পড়েছিলো। টমের বেস্টে পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ জমাট বেঁধে অনেক কষ্ট পাচ্ছিল। এটা আমাদের হৃদয়ে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমরা দুটি কুকুরছানা এনে দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার আরও দুটি কুকুরছানা এনে দেয়া হয়। টম আপন সন্তান ভেবে তাদের আগের মতোই দুধ খাওয়াচ্ছেন। টম তার সমস্ত বেদনা ভুলে কুকুরছানাগুলোকে ফিরে পেয়েছে বলে আমার ধারণা।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা টমকে আবারও সন্তানহারা অসহায়ত্বের নতুন জীবন ফিরিয়ে দিতে পেরেছি বলে মনে করছি। কয়েকটা দিন আমাদের উপজেলা প্রশাসনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের প্রতি অনীহা দেখা দেয়। সবসময়ই আমাদের চোখে ভেসে উঠছে সন্তানহারা মা কুকুরটির আকুতি।
তিনি আরও বলেন, ইনশাআল্লাহ, আল্লাহর রহমতে আমরা একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় নতুন চারটি কুকুরছানা দেয়ায় টমের নতুন জীবন ফিরে দিতে পেরেছি বলে মনে করছি। আট'টি কুকুরছানা হত্যায় অভিযুক্তকে আল্লাহ বিচার করেছেন বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে, প্রকৃতি বড়ই বৈচিত্র্যময়।
আরও পড়ুন:








