বুধবার

৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

সিরাজগঞ্জে ইজারা বন্ধ, কৌশলী খাস আদায়-বাড়তি চাপে ক্রেতা-বিক্রেতারা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:১৩

শেয়ার

সিরাজগঞ্জে ইজারা বন্ধ, কৌশলী খাস আদায়-বাড়তি চাপে ক্রেতা-বিক্রেতারা
ছবি: বাংলা এডিশন

সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সোহাগপুর হাটে নির্ধারিত টোলের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ইজারা ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় খাস পদ্ধতিতে টোল সংগ্রহের সুযোগে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছে, যা ক্রেতা–বিক্রেতাদের জন্য বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে।

কোটা বৈষম্য আন্দোলনের পর থেকে হাটের ইজারা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। তিন দফা টেন্ডার আহ্বান করেও কাঙ্ক্ষিত ইজারাদার পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়। ফলে গত সাড়ে সাত মাস ধরে পৌরসভা খাস আদায় পদ্ধতিতে টোল সংগ্রহ করছে। স্থানীয়দের দাবি, এই পরিস্থিতিতে হাটের টোল আদায়ের দায়িত্ব অনানুষ্ঠানিকভাবে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে চলে যায়। এ কারণে শুরু থেকেই অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ দেখা দেয়, তবে তদারকি কমিটি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হাটের সামনে টোল আদায়ের হার ও চার্ট টানানো বাধ্যতামূলক হলেও সোহাগপুর হাটে এ নির্দেশনা মানা হয়নি। এতে ক্রেতা–বিক্রেতাদের জন্য সরকারি নির্ধারিত টোল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

হাটে তাঁতপণ্য, গরু–ছাগল, কাঠ, ফার্নিচার ও খাদ্যপণ্যের বড় লেনদেন হয়। ১৪৩০ বাংলা সালে হাটটি দুই কোটি ৩৭ লাখ এবং পরের বছর দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর কোনো দরপত্র জমা না পড়ায় ইজারা কার্যক্রম বাতিল হয়। স্থানীয়দের মতে, হাটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে একটি গোষ্ঠী কৌশলগতভাবে দরপত্র জমা দিতে বাধা দেয়।

হাটের কাঠপট্টি, শাড়ি পট্টি, গেঞ্জি পট্টিসহ বিভিন্ন পণ্যভিত্তিক পট্টি উল্লেখযোগ্য অঙ্কে সাব ইজারা দেওয়া হয়েছে। সাব ইজারাদাররা জানান, বেশি টাকা পরিশোধ করতে হওয়ায় তাদেরও বাড়তি খাজনা তুলতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অনুযায়ী, ফুটপাতের দোকানিদের কাছ থেকে আগে ১০০ টাকা নেওয়া হলেও এখন ২৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। হকারদের ক্ষেত্রে ২০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। ছাগলের খাজনা ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০–৩০০ টাকা, গরুর ক্ষেত্রে ৪৫০ টাকা থেকে ৬০০–৭০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। মুড়ি বিক্রেতাদের প্রতিটি হাটে ১০০–১৫০ টাকার পরিবর্তে ২০০–২৫০ টাকা দিতে হচ্ছে।

কাঠপট্টির ব্যবসায়ীরা জানান, নির্ধারিত হারের বাইরে বাড়তি টোল নেওয়া হচ্ছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রসিদ দেওয়া হয় না। সরকারি তালিকার সঙ্গে বাস্তব টোল আদায়ের হার মিলছে না বলেও তাদের অভিযোগ।

সাব ইজারাদারদের ভাষ্য, উচ্চমূল্যে পট্টি নেওয়ায় তাঁদের ব্যয় মেটাতে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি খাজনা নিতে হচ্ছে। এতে তাদের দায় বাড়লেও মূল চাপে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতা–বিক্রেতারা।

বেলকুচি পৌর প্রশাসক জানান, হাটের আয়–ব্যয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছেই রয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টেন্ডারে সাড়া না মেলায় বাধ্য হয়ে খাস পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হচ্ছে। হিসাবরক্ষণ দপ্তর জানায়, গত সাড়ে সাত মাসে খাস আদায় পদ্ধতিতে এক কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়েছে।

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্ধারিত টোলই আদায় করা হচ্ছে বলে দপ্তর থেকে জানা গেছে, এবং মনিটরিং কমিটি নিয়মিত হাট পরিদর্শন করছে। এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তাদের কাছে পৌঁছেনি বলেও তিনি জানান।



banner close
banner close